রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণা হয়েছে। আদালত জানিয়েছেন, গাম্বিয়া নিজেদের নামে আবেদন করেছে। তারা চাইলে ওআইসি বা যেকোনো সংস্থা অথবা যেকোনো দেশের সহযোগিতা চাইতে পারে। গাম্বিয়া চাইলে তাদের মামলা চালিয়েও যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে গাম্বিয়ার করা মামলায় আদালতের এখতিয়ার নেই বলে যে দাবি করেছে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আর গাম্বিয়া মিয়ানমারকে যে নোট ভারবাল দিয়েছিল তা বিরোধের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত। আদালত এও জানিয়েছেন যে, গণহত্যা ঠেকাতে মিয়ানমারকেই সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণায় আদালত জনিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের হত্যা, নিপীড়ন, বাস্তুচ্যুতির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকাতে হবে। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আইসিজের কাছে গাম্বিয়া যে পাঁচটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার জন্য আবেদন করেছে তার মধ্যে চারটি মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গাম্বিয়ার প্রত্যাশিত প্রথম ব্যবস্থা হিসেবে বলা হয়, ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বরের জেনোসাইড অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি প্রদানবিষয়ক সনদের আলোকে মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বা তার অংশবিশেষকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা বা শারীরিক নিপীড়ন, ধর্ষণ বা অন্যান্য যৌন সহিংসতা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভূমি ও জীবিকা ধ্বংস, খাবার বা জীবনের অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ থেকে বঞ্চিত করা এবং দুর্ভোগ চাপিয়ে দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করবে।
দ্বিতীয় ব্যবস্থা হিসেবে বলা হয়, মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার কোনো সামরিক, আধাসামরিক বা অনিয়মিত সশস্ত্র ইউনিট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জেনোসাইড চালানো এবং এর পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না।
প্রত্যাশিত তৃতীয় ব্যবস্থা হিসেবে গাম্বিয়া জানায়, জেনোসাইডের অভিযোগে আবেদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ মিয়ানমার ধ্বংস করবে না বা সেগুলোর অবস্থান বদলাতে পারবে না।
চতুর্থ ব্যবস্থার আবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার ও গাম্বিয়া এমন কোনো উদ্যোগ নেবে না, যাতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়।
পঞ্চম ও শেষ ব্যবস্থা হিসেবে আবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী আদেশের সর্বোচ্চ চার মাসের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে আইসিজেতে মিয়ানমার ও গাম্বিয়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
আদালত গাম্বিয়ার চারটি বিষয় মঞ্জুর করে মিয়ানমারকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মিয়ানমারকে অবশ্যই চার মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে যে তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর প্রতি ছয় মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দেবে। তবে আদালত জেনোসাইডের অভিযোগে আবেদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ মিয়ানমার ধ্বংস করবে না বা সেগুলোর অবস্থান বদলাতে পারবে না; এই দাবিটি মঞ্জুর করেননি।
এর আগে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে এমন অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় বলা হয়, মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।
গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর ৩ দিনব্যাপী নেদারল্যান্ডসের হেগে ওই মামলার শুনানি হয়। এতে মিয়ানমারের পক্ষে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি অংশ নেন। সে সময় তিনি রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানকালে কিছু সেনা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন সু চি। অন্যদিকে গাম্বিয়া মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখা যায় না বলে জানায়। তারা রোহিঙ্গা গণহত্যা ও সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অন্তর্বর্তী নির্দেশের দেওয়ার অনুরোধ করে। পরে আজ অন্তর্বর্তী আদেশে আলোচিত এই মামলাটি চালানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আদালত।