ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের আশঙ্কা কমছে?

SHARE

আপাতত একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা থেকে বিরত থাকল ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে এখনই নতুন করে সামরিক সংঘাতে জড়াচ্ছে না দেশ দুটি। যুদ্ধ ঘোষণা না করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। কিছুটা হলে যুদ্ধের আশঙ্কা কমেছে মধ‌্যপ্রাচ্যে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ন

গগতকাল বুধবার রাতে হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ভাষণে তিনি জানিয়েছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজনও মার্কিন সেনা মারা যাননি। একজন ইরাকি সেনাও মারা যায়নি। সেনাঘাঁটির সামান‌্য ক্ষতি হয়েছে মাত্র।

ট্রাম্প বলেছেন, সোলাইমানিকে হত‌্যা করে আমরা ইরানের সন্ত্রাসবাদকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি। ইরান ওদের মনোভাব না বদলালে ওদের উপর আরও শক্তিশালী আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বহাল করবে আমেরিকা। আমি যতদিন প্রেসিডেন্ট আছি ততদিন পর্যন্ত ইরান পরমাণু শক্তিধর হতে পারবে না। ইরান যে পরমাণু চুক্তি ভেঙেছে তার ফলে ইরানের বিরুদ্ধে ব‌্যবস্থা নিক ওই চুক্তির অংশীদার ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন।

এরপরই নাটকীয়ভাবে ট্রাম্প ইরানের প্রশংসা করে বলেন, আমরা জানি, ইসলামিক স্টেট, আল কায়দা হলো ইরানের স্বাভাবিক শত্রু। এরা আমেরিকারও শত্রু। এদের ধ্বংস করতে ইরানও সর্বশক্তি দিয়ে আন্তরিকভাবে লড়েছে। আমরা চাই ইরান একটা সমৃদ্ধ আর্থিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। কিন্তু মধ‌্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে গেলে ইরানকে জেহাদ ও সামরিক আগ্রাসন ত‌্যাগ করতে হবে।

এর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি টুইট করেন, জেনারেল সোলাইমানি আল কায়দা, ইসলামিক স্টেট, আল নুসরা ইত‌্যাদি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের হারিয়ে দিয়েছিলেন। ইরান এই লড়াইটা না লড়লে এতদিনে পূর্ব ইউরোপের শহরগুলো সন্ত্রাসবাদীদের হাতে চলে যেত। এই লড়াইগুলো যদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না হয়, তাহলে কোনটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ? কিন্তু এই এলাকা থেকে মার্কিন বাহিনীকে সরতে হবে।’

রাজনৈতিক মহলের মতে, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্যে কিন্তু যুদ্ধের হুংকার ছিল না। ছিল না বদলার হুমকি। ফলে ইরানের মিসাইল হামলার পরেও এদিন যুদ্ধংদেহি আবহটা অনেকটা স্তিমিত হয়ে যায়। বুধবার সকালটা শুরু হয়েছিল অবশ্য ভিন্ন সুরে। সাত সকালেই ইরান দাবি করে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে ৮০ জন মার্কিন সেনা।

মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ যখন প্রবল শৈত‌্যপ্রবাহ এবং তুষারপাতে কাঁপছে গোটা পশ্চিম এশিয়া তখন অন্ধকার আকাশের বুক চিরে উড়ে যায় ইরানের একগুচ্ছ ব‌্যালেস্টিক মিসাইল। তা আছড়ে পড়ে ইরাকে দুটি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে। প্রবল বিস্ফোরণ ও আলোর ঝলকানিতে কেঁপে ওঠে বাগদাদ ও আশপাশের এলাকা। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকা।

ইরানের দাবি, হামলায় নিহত হয়েছেন ৮০ জন মার্কিন সেনা। ধ্বংস হয়েছে মার্কিন সেনা শিবির। কয়েকটি কপ্টার ও বহু সামরিক সরঞ্জাম।

ইরানের সরকারি টিভিতে ঘোষণা করা হয়েছে, জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও ছ’জন ইরানি যোদ্ধার মৃত‌্যুর বদলা নিল ইরান। আমরা খতম করেছি ৮০ জন মার্কিন সন্ত্রাসবাদীকে।

হামলার পরেই ১৯৭৮ সালের ঐতিহাসিক কোওম বিক্ষোভের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে জাতির উদ্দে‌শে‌ ভাষণ দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি সগর্বে ঘোষণা করেন, আজ আমরা আমেরিকার গালে সপাটে থাপ্পড় মেরেছি।

পশ্চিমি সংবাদমাধ‌্যম জানিয়েছে, ইরাকে মার্কিন সেনা শিবিরের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখনও বিশ্বাসযোগ‌্য ছবি বা তথ‌্য মেলেনি। ফলে ইরানের দাবির সত‌্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তবে ইরাক সরকার দাবি করেছে, ইরান তাদের মাটিতে ১৫টি নয়, ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এই হামলার খবর পেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুই হয়নি এরকম ভঙ্গি করে বলেছেন ‘অল ইজ অয়েল’ (সব ঠিক আছে)। এদিকে, ইরানের হামলার জেরে দেশের সেনাকে চূড়ান্ত প্রস্তুত নিয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।