সৌদির সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্ব ঠেকাতেই সোলাইমানিকে হত্যা!

SHARE

চিরশত্রু সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতার পথে অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছিলেন সোলাইমানি। আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। কেননা সৌদি-ইরান এক হয়ে গেলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কোনো চিহ্নই আর থাকবে না।

ইরানের সেনাবাহিনী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সবচেয়ে শক্তিশালী ও দক্ষ ব্রিগেড ‘কুদস ফোর্স’। আর এই বাহিনীরই প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। বাহিনীর প্রধান হিসেবে ছাড়াও সোলাইমানির ছিল অসাধারণ সমর দক্ষতা। তাকে ইরানের গণমাধ্যমে ‘মহাবীর’ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে।

আল কুদস ফোর্স ও সোলাইমানির হাত ধরেই ইরানি সামরিক বাহিনী নিজেদের ছায়া শক্তির আন্তর্জাতিক বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের আনাচে-কানাচে সোলাইমানি ছড়িয়ে দিয়েছে কুদসের ছায়া বাহিনী। যারা ইরানের পক্ষে ওইসব অঞ্চলে কাজ করছে।

ইরাকের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের উন্নতি, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়েছে সোলাইমানির সামরিক-কূটনৈতিক দক্ষতায়। বিশ্বজুড়ে সমরবিদ্যায় সোলাইমানি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সামরিক পদে থেকে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে।

মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে ইরানের সবচেয়ে বড় শত্রু সৌদি আরব ও ইসরায়েল। সৌদি-ইসরাইল আবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সৌদির মতো শত্রুর সঙ্গেও ইরানের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরির পথে অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছিলেন সোলাইমানি। ইরাকের মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয় তার। ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কূটনৈতিক আতঙ্ক হয়ে ওঠে সোলাইমানি।

সোলাইমানির এসব তৎপরতা না থামলে আর সৌদির সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্ব হলে সেটি হতো, ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রুকে বসে আনা আর যুক্তরাষ্ট্রের পোষা বিড়াল বাঘে খাওয়া। ফলে এবার আর সোলাইমানি হত্যা করা ছাড়া বিকল্প নেই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যদিও আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত ছিল সোলাইমানি।

গত শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) বাগদাদের বিমানবন্দরের সামনে সোলাইমানির গাড়ি বহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এ হত্যার মাধ্যমে ট্রাম্প সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অন্যদিকে ইরানিরা একত্রিত হয়েছে। গোটা ইরান নতুন করে জেগে উঠেছে।

এমন অবস্থায় কুদস বাহিনীর নতুন প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি। তিনি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির বহুদিনের সহযোদ্ধা ও কুদস বাহিনীর ডেপুটি ছিলেন তিনি।

গত শুক্রবার তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েই সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের জন্য ইরান ‘চরম প্রতিশোধ’ নেয়ার যে অঙ্গীকার করেছে তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন জেনারেল কানি।

সোলাইমানির মতোই কানিও সাদ্দাম হোসেনের শাসন আমলে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলমান রক্তক্ষয়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধের অংশগ্রহণকারী অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা।

জেনারেল সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘শহীদ সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নামে প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি। নিশ্চিতভাবেই সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

বুধবার সকালেই দেখা গেল সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি সামরিক ঘাঁটিতে মুহুর্মুহু হামরঅ চালিয়েছে কুদস বাহিনী। পরপর ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটি জেনারেল কিয়ানির দায়িত্ব পাওয়ার পর কোনো শত্রুর ওপর প্রথম আক্রমণ।

এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের মুখে শুধুমাত্র ‘থাপ্পড়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। কিন্তু এই হামলায় লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ইরান যে ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তার একটি ক্ষেপণাস্ত্রও প্রতিরোধ করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। ফলে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইরানের সামান্য থাপ্পড়ই কেন ঠেকাতে পারলো না মার্কিনিরা?

ইরানের হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো কাজেই আসেনি। তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটা দুর্বল হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি, ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অনন্য উচ্চতায় নিয়েছে? নাকি মার্কিনিরা ইরানকে ছোট কোনো প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করছে?