কাসেম সোলাইমানি নিহতের ঘটনায় ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের বিবৃতি

SHARE

মার্কিন হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় জেনারেল কাসেম সোলায়মানির নিহতের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস। সেখানে এ হামলাকে বর্বরোচিত এবং কাসেম সোলায়মানিকে শহীদ বলে উল্লেখ করা হয়। পবিত্র কুরআনের আয়াতসহ বাংলাদেশের জনগণকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দিয়েছে দূতাবাস।

বিবৃতিতে সুরা আহযাবের ২৩ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে-

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
[الأحزاب: 23]

‘মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন করেনি। সুরা আহযাব, আয়াত-২৩)’

বাংলাদেশের মানুষকে ‘বীর জনগণ’ সম্বোধন করে বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ঢাকাস্থ দূতাবাস ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের নির্মুল অভিযানের অক্লান্ত সৈনিক, ইসলামের বীর সেপাহসালার শহীদ জেনারেল কাসেম সোলায়মানির বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। জেনারেল সোলায়মানি শুধুমাত্র ইরানি জনগণের নয়; বরং তিনি বিশ্বের সকল মুসলমান এবং নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের মর্যাদা ও গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।

মার্কিনীরা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সংঘাতের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে দিতে অত্যন্ত বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে ইরানের কুদস ব্রিগেডের এই স্বনামধন্য কমান্ডারকে শহীদ করেছে। তারা এই জঘন্য অপরাধের মাধ্যমে ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি পদদলিত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে চেয়েছে। তবে এই জঘন্য অপরাধের নির্বোধ হোতারা যেন মনে রাখে যে, তারা তাদের অপরাধের দাঁতভাঙা জবাব পাবে।

জেনারেল সোলায়মানির শাহাদাতের ঘটনা আবারো এ কথা প্রমাণ করলো যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের স্বাধীনচেতা জাতিগুলোর কাছে সর্বাধিক ঘৃণ্য রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের প্রতীকে পরিণত। হোয়াইট হাউজ ও পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের জেনে রাখা উচিত যে, গুণ্ডামী ও সীমালঙ্ঘনের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং যারা জেনারেল সোলায়মানির মত স্বাধীনচেতা ব্যক্তি ও অন্যান্য শহীদদের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করেছে তাদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।

শহীদ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ইসরাইল, আল-কায়দা ও আইএস জঙ্গিদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ইরাক ও সিরিয়াকে আইএসের মত রক্তপিপাসু জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর একমাত্র অপরাধ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লালিত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস নির্মুলে আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাকে পথের কাঁটা মনে করেছিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই মহান শহীদের পবিত্র রক্ত প্রতিরোধ সংগ্রামকে আগের চেয়ে বেগবান করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাংদেহী নীতিকে অকার্যকর করতে সাহায্য করবে।

জেনারেল কাসেম সোলায়মানি তাঁর পুরো বরকতময় জীবন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে নিবেদিত করেছেন। নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের জন্য শাহাদাতের উচ্চমর্যাদা তাঁর প্রাপ্য ছিল।

এই ঘটনায় যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, বিশেষ করে শহীদ জেনারেল সোলায়মানি ও শহীদ আবু মাহদি আল মুহান্দিসের নাম ও স্মৃতি অনন্তকাল বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষের মনে অমর হয়ে থাকবে। আর এই অপরাধের যারা হোতা তারা চিরদিন ইতিহাসে ধিকৃত হয়ে থাকবে।

বিবৃতির শেষে সুরা শোয়ারার ২২৭ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে-

(وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ (الشعرء: 227

‘জালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে তারা কোন স্থলে প্রত্যাবর্তন করবে। (সুরা শোয়ারা, আয়াত-২২৭)’