অভিশংসিত ট্রাম্প, এখন যা ঘটবে

SHARE

ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ ও মার্কিন কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তাকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হলো।

তবে তার পূর্বসূরি, ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের মতো ট্রাম্পও গদি হারাবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, এর পরের ধাপে অভিশংসন প্রক্রিয়া যাবে সিনেটে। হাউসের এই উচ্চকক্ষ রিপাবলিকানদের দখলে। ফলে সেখানে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটর ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা কম। বুধবার যে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ট্রাম্পকে পদচ্যুত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সেটি ডেমোক্র্যাটদের দখলে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দু’টি। প্রথমত, তিনি আগামী নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী, ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা শুরুর জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিয়েছিলেন। সেই মামলা চললে বাইডেনের ভোটে লড়া সম্ভব হত না। ফলে ট্রাম্পের এই চেষ্টাকে সরাসরি নির্বাচনী হস্তক্ষেপ বলা যেতে পারে। এই প্রস্তাবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২৩০টি ভোট পড়েছে, আর তার পক্ষে পড়েছে ১৯৭ ভোট।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ, তিনি মার্কিন কংগ্রেসে নিজের বিরুদ্ধে চলা তদন্তে বাধা দিয়েছেন। মার্কিন সংবিধান অনুয়ায়ী, কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া গুরুতর অভিযোগ। কারণ কংগ্রেসের হাতেই কোনো প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সেই অভিযোগেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে ২২৯টি, আর পক্ষে ১৯৮টি।

নিয়ম অনুসারে, হাউসে কোনো প্রস্তাবের পক্ষে ২১৬টি ভোট পড়লেই সেই প্রস্তাব পাস হয়ে যাবে। ফলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের জন্য আনা দু’টি প্রধান প্রস্তাবই পাস করে দেন হাউসের সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেস সদস্যরা।

তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময় থেকেই ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ’, ‘আমার বিরুদ্ধে ডাইনি-খোঁজ শুরু হয়েছে’ ‘এ সব কিছুই একটা বড়সড় চক্রান্ত’— এই সব অভিযোগ এনে টুইটারে সমালোচনার ঝড় তোলেন ট্রাম্প।

বুধবার হাউসে শেষ পর্যন্ত অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়ে যাওয়ার পরেও ট্রাম্প টুইট করেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা রিপাবলিকানদের ওপর আক্রমণ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পুরো হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটরা যখন একজোট, তখন উল্টো পথে হাঁটলেন দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী তুলসী গাবার্ড। তিনি কংগ্রেসের একমাত্র ডেমোক্র্যাট সদস্য, যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে কোনো অবস্থান নেননি। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা।

অভিশংসন প্রস্তাবে ‘ইয়েস’ বলার পরিবর্তে তিনি বলেছেন, ‘প্রেজেন্ট।’ তুলসী বলেছেন, আমি মাঝামাঝি রয়েছি। অভিশংসন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারিনি, কারণ আমি জানি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভুল কাজ করেছেন। তবে আমি অভিশংসন প্রস্তাবে সমর্থনও দিতে পারছি না, কারণ বর্তমান প্রেসিডেন্টকে পদ থেকে সরানোর কাজটি যেন কোনো বিভাজনের প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত না হয়।

হাউস প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার মানে অবশ্য এই নয় যে, কালকেই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে যেতে হবে। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট যতক্ষণ না ট্রাম্পকে পদচ্যুত করছে, ততক্ষণ তিনিই প্রেসিডেন্ট। হাউসে গৃহীত প্রস্তাব পাঠানো হবে সিনেটে। সেখানে তা নিয়ে সওয়াল হবে। যদি অন্তত ৬৭ জন (দুই-তৃতীয়াংশ) সিনেটর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তা হলেই পদত্যাগ করতে হবে ট্রাম্পকে।