সম্প্রতি ভারতের হায়দরাবাদে তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। একইভাবে উত্তরপ্রদেশে এক তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ সামনে আসে। ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যা করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে গণধর্ষণে অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে সেই তরুণী মারা গেছে। বন্ধ ঘরে যৌনদাসী বানিয়ে রাখা হয়েছিল এই তরুণীকে।
জানা গেছে, সেই তরুণীকে একটি অন্ধকার কুঠুরিতেই আটকে রাখা হয়েছিল। সেই ছোটো বন্ধ ঘরটায় এক চিলতে আলোও ঢুকত না ৷ ছিল না আকাশ দেখার অনুমতি ৷ অন্ধকার কুঠুরিতেই দিনের পর দিন চলত ধর্ষণ৷ কথা না শুনলেই শারীরিক নির্যাতন করা হত ৷ রায়বারেলির সেই বন্ধ ঘর থেকে যে যন্ত্রণার শুরু হয়েছিল। তার ইতি ঘটে শুক্রবার রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে ৷ দিল্লির সফদরগঞ্জ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উন্নাওয়ের নির্যাতিতার।
২০১৮ সাল, ডিসেম্বর মাস ৷ আজ থেকে দুই বছর আগে প্রথমবার ধর্ষণের শিকার হন সেই তরুণী। মাথায় বন্দুক রেখে শিবম (ঘটনায় যে অভিযুক্তের নাম বারবার উঠে এসেছে ) ও তার ভাই ধর্ষণ করে তাঁকে ৷ এই ঘটনার অভিযোগ জানিয়ে ৫ ও ৬ মার্চ দুটি এফআইআর করেন নির্যাতিতা ৷ সেই বয়ানে রয়েছে তাঁর দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রণা ও অত্যাচারের কথা। রায়বারেলির একটি ঘরে তাঁকে ‘যৌনদাসী’ বানিয়ে রাখা হয়েছিল ৷ প্রতিদিন চলত গণধর্ষণ ৷ আকাশ দেখার অনুমতি ছিল না তাঁর ৷ রায়বারেলির ওই ঘর থেকে বাইরে তাকালেই মারধর করা হতো ৷ পাশাপাশি চলত অন্যান্য শারীরিক অত্যাচার ৷ তারপর গণধর্ষণ ৷ ধর্ষণের ভিডিয়ো বানিয়ে রেখেছিল শিবম ৷ সেই ভিডিয়োর হুমকি দিয়ে আবার ধর্ষণ করা হত তাঁকে ৷ বলা হয়েছিল, পুলিশে খবর দিলে আবার ধর্ষণ করা হবে ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে সেইসব ভিডিও ৷ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিনের পর দিন তাঁর উপর নির্যাতন চালিয়ে গেছে শিবম ৷ রায়বারেলির লালগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন যুবতি ৷ ঘটনায় ২ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
সম্প্রতি তারা জেল থেকে ছাড়া পায় ৷ রায়বারেলির আদালতে ধর্ষণ মামলার শুনানি ছিল৷ 5 ডিসেম্বর সাক্ষ্য দিতেই যাচ্ছিলেন নির্যাতিতা ৷ আদালতে যাওয়ার পথে তার উপর হামলা হয় ৷ শিবম ও আরও চারজন আঘাত আনে তার উপর ৷ রাস্তাতেই মারধর শুরু করা হয় তাকে ৷ শুরু হয় কোপানো ৷ চাকু দিয়ে প্রথমে তাঁর গলায় আঘাত করা হয় ৷ তারপর শরীরের অন্যান্য অংশেও ৷ তারপরই চূড়ান্ত আঘাত ৷ গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ৷ অভিযুক্তরা পালিয়ে যায় ঘটনাস্থান থেকে ৷ শরীরের উপরের অধিকাংশই পুড়ে যায় ৷ সেই সময়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ ৷ দগ্ধ শরীর নিয়ে ছুটতে থাকেন তিনি ৷ শেষ পর্যন্ত এক পথচারীর থেকে ফোন নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করে সাহায্য চান নির্যাতিতা ৷ স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে ৷ সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে সেদিনই দিল্লির সফদরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে ৷ ভেন্টিলেটশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে ৷ গতরাতে ১১ টা ৪০ মিনিটে শেষ হয় লড়াই, ইতি ঘটে এক যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের।
সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া