দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানানো সেই হুসনা উদ্ধার

SHARE

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তারের পর হুসনা আক্তার নামে আরেক বাংলাদেশি নারী কর্মীকে উদ্ধার করেছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় কালের কণ্ঠকে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের নির্দেশনায় হুসনা আক্তারকে গতকালই উদ্ধার করা হয়েছে। গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় হুসনা আক্তার জেদ্দা থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে নাজরান পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।

এদিকে হুসনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওই দেশটিতে কর্মী নিয়োগ ব্যবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠেছে। হুসনা আক্তার তাঁর ভিডিও বার্তায় নির্যাতনের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তাঁকে সৌদি আরবে পাঠাতে মধ্যস্থতাকারীর প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। একই সঙ্গে তিনি তাঁকে ফিরিয়ে আনতে আকুতি জানিয়েছেন।

হুসনা আক্তারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কালের কণ্ঠের অনলাইনে ও সোমবারের মুদ্রণ সংস্করণে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার বিকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খবরটি দেখার পরপরই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশি ওই নারীকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশনা দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও হুসনা আক্তার নির্যাতিত হওয়ার খবর জেনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশনা দিয়েছেন।’

হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জের বাসিন্দা হুসনা আক্তার সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি মোসা. হুসনা আক্তার। দালালে ভালা কথা কইয়া আমারে পাঠাইছে সৌদিতে। নিজরাল (নাজরান) এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। ওরা আমার ওপর অত্যাচার করে। আমি বাক্কা দিন (কিছু দিন) হইছে আছি। এখন এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা।

এই কথা বলায় ওরা আরো বেশি অত্যাচার করে। আমি এজেন্সির অফিসে ফোন দিছি। অফিসের এরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে পারো আমারে বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না। এরা আমারে ইতা করতাছে। আমারে ভালা কামের কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমারে ইতা করতাছে ওরা। আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’

এর আগে ভাইরাল হওয়া সুমি আক্তারের ভিডিও বার্তাটিও ছিল প্রায় একই ধরনের। ওই বার্তা নজরে আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস তাঁর অবস্থান চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর মূল দায়িত্ব পালন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়া কর্মী প্রেরণকারী অনেক প্রতিষ্ঠানও জড়িত। সৌদি আরবে জনশক্তি পাঠানো এবং সেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রিয়াদ সফরে গেছে।

সৌদি আরবে দুই লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি নারী কর্মী কর্মরত আছেন। যে নারী কর্মীরা বাসা-বাড়িতে কাজ করতে যান তারা সৌদি ভাষা বোঝেন না এবং সৌদি রীতিতে রান্না করতে জানেন না। এতেও নানা ধরনের সমস্যা হয়।

সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের জন্য দূতাবাসে ২৪ ঘন্টা হটলাইন চালু আছে। নির্যাতনের শিকার হলে নারীরা গিয়ে দূতাবাসের শেল্টার হোমে আশ্রয় নিতে এবং নির্যাতনের অভিযোগ করতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশে যখন লোকজন যাচ্ছে তখন ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস জানেও না। আবার তারা যখন সমস্যায় পড়েন তখন দূতাবাসের ওপর দায় বর্তায়।

তিনি জানান, বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের নিবন্ধন আবশ্যিক করা হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। যে কর্মীরা বিদেশে যাবেন তাদের অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে।