প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে যেকোনো ধরনের সহিংসতা, নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান রফতানি প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে তার সরকারের সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা উচ্চাভিলাষী মনে হলেও আমি মনে করি, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় এই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব।”
শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আপনারা অরাজকতা দেখেছেন। মাত্র দুই দিন আগে তারা একজন স্কুলশিক্ষককে হত্যা করেছে। অপর একজন স্কুলশিক্ষকের ওপর পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়েছে। তার এক সন্তান এতে গুরুতর আহত হয়েছে। তিনি এ ধরনের অরাজকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, জনগণ এ ধরনের সন্ত্রাস পছন্দ করে না। তারা শান্তি ও উন্নয়ন চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমাজ ও সরকারকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। পরবর্তী সময়ে এটিকে ছয় লেনে উন্নীত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো সতর্ক থাকতে এবং শিল্প খাতের কলঙ্কিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য প্রকৃত ব্যবসায়ীদের প্রতি জানিয়ে বলেন, “ধনলোভী এসব ব্যক্তি রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নামে ওই ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। পরে ব্যাংকের অবিবেচক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে।”
‘এদের সংখ্যা অনেক কম, তবে একটি বা দুটি অঘটন ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর সঠিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই ব্যক্তিদের কারণে সব ব্যাংকার সমস্যায় পড়েন এবং যারা প্রকৃত উদ্যোক্তা তারা যখন ঋণের জন্য ব্যাংকে যান, তখন জটিলতায় পড়েন।”
শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের প্রতারণা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অবিচল অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ব্যবসায়ী ব্যক্তিগণই কেবলমাত্র ব্যবসা করবেন। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়া।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক আছে তারা জনগণের জন্য কোনো ভালো খবর পছন্দ করে না।
‘একটি রাজনৈতিক দলের স্বপ্ন হচ্ছে সংক্ষিপ্ত পথে ক্ষমতায় যাওয়া,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ভূমিতে পরিণত করতে চায়।”
প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত ডিআইটিএফ আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, মেলা একই ছাতার নিচে উদ্যোক্তা, উৎপাদক, রফতানিকারক ও আমদানিকারকদের সমবেত করেছে এবং একইভাবে দেশী পণ্যের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ।