নজিরবিহীন বিপাকে ট্রাম্প!

SHARE

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমার জেলেনস্কির ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। একজন সিআইএ কর্মকর্তা ফোনালাপ ফাঁস করেছেন বলে জানা গেছে। এরপরই মূলত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের তদন্ত শুরু হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তা এক সময় হোয়াইট হাউসে কর্মরত ছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। ২০২০-র নির্বাচনের আগেও সেই একই বিতর্কের সামনে এখন তিনি। ফের তাঁর বিরুদ্ধে ভোটে জেতার জন্য অন্য রাষ্ট্রের সাহায্য নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এবারের অভিযোগ আগের চেয়ে আরো বেশি গুরুতর। এই পরিপ্রেক্ষিতে নজিরবিহীন বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন মিডিয়ার দাবি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খোলা এই ‘হুইসলব্লোয়ার’ মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র সদস্য। বিরোধী নেতার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া সহজ, কিন্তু অভিযোগকারী গুপ্তচর হলে সেই কাজ বেশ কঠিন। বৃহস্পতিবার এই অভিযোগপত্রের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ্যে আসার পর তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বে হৈচৈ ফেলেছে।

অভিযোগকারী লিখেছেন, কাজ করার সময় আমি একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পেরেছি, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ভোটে অন্য রাষ্ট্রগুলির থেকে সাহায্য আদায়ের চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর যে কথোপকথন হয়েছে তা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।

অভিযোগকারীর দাবি, ফোনকলটি ঘিরে বিতর্ক হতে পারে এটা আঁচ করে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে হোয়াইট হাউস। ‘সিচুয়েশন রুম’র পক্ষ থেকে কথোপকথনের বিশদ বিবরণ হোয়াইট হাউসের হাতে তুলে দেওয়া হলেও, তারা শুধুমাত্র সারাংশ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয়। একইসঙ্গে সিচুয়েশন রুমকে নির্দেশ দেওয়া হয়, এই কথোপকথন সাধারণ কম্পিউটার থেকে সরিয়ে সেই কম্পিউটারে রাখতে যেখানে গোপন সরকারি নথি রাখা হয়।

বিতর্ক যে নজিরবিহীন তা মার্কিন কংগ্রেসের বয়ান দিতে গিয়ে স্বীকার করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান জোসেফ ম্যাগুয়েরও। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চেপে ধরেছেন বিরোধীরা।

হাউসের স্পিকার তথা ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি প্রশ্ন তুলেছেন, কী করে একজন সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য অন্য একটি দেশকে অনুরোধ করতে পারেন প্রেসিডেন্ট? দেশে কি আইনকানুন বলে কিছুই নেই?

এদিকে, নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি টুইট করে দাবি করেছেন, এটা মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, টুইটারে ট্রাম্প এই কথা বললেও নিউ ইয়র্কের একটি বৈঠকে কর্মকর্তাদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, ওই গুপ্তচরকে কে এসব বলল?

ফোনালাপের তথ্য ফাঁস করা ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনালাপের সব তথ্য ‘প্রকাশ’ ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা।

ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ দেন।

জানা গেছে, টেলিফোন আলাপের প্রকাশিত বিবরণ অনুসারে জেলেনস্কি ইউক্রেনের সামরিক চাহিদার কথা উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে জানান, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল কিনতে আগ্রহী। সে কথার জবাবে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলার বদলে ‘আপনাকে আমাদের জন্য একটা উপকার করতে বলব’-এমন প্রস্তাব রাখেন ট্রাম্প।

সূত্র : লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, এপি, এই সময়