ব্রেক্সিট : পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ হারালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন

SHARE

ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে হেরে গেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোটাভুটিতে জনসন ভোটে হেরে যাওয়ায় পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটবিরোধী এমপিরা।
এখন তাদের জন্য চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট ঠেকাতে আজ বুধবার একটি বিল আনার সুযোগও তৈরি হলো।
তবে ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর বরিস জনসন বলেছেন, তিনি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনবেন।
আগামী ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ, যেটি ব্রেক্সিট হিসেবে পরিচিত তা কার্যকর হওয়ার কথা। কীভাবে, কোন চুক্তিতে সেই বিচ্ছেদ হবে, এ নিয়েই চলছে এখন আলোচনা।
তবে এই বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো চুক্তি হোক বা না হোক, নির্ধারিত তারিখেই ব্রেক্সিট কার্যকর করার ব্যাপারে অনড় থাকার কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই বেশ উত্তপ্ত ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যে ছুটি শেষে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। আগেই এক সভায় বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে নিজ দলের যারা বিরোধিতা করবেন তাদের বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু বিরোধী দলের পাশাপাশি নিজ দলের বিদ্রোহী এমপিদের কাছে হাউস অব কমন্সে ৩২৮-৩০১ ভোটে হেরে গেলেন তিনি।

জনসনের নিজ দলের ২১ এমপি যাদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও আছেন তারা এ ভোটাভুটিতে সরকারকে হারাতে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
ভোটে জয়ের ফলে আজ বুধবার পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ পেলেন বিরোধী ও বিদ্রোহী এমপিরা। এ ভোটের ফলে চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিরোধীরা ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে পার্লামেন্টে বিল আনতে পারবেন।
ভোটের পর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে, যেসব টোরি এমপি বিদ্রোহ করেছে তাদের পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে।
বরিস জনসন বলেছেন, তিনি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনবেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আশা, বহিষ্কার হুমকি ও আগাম নির্বাচনের কথায় বিদ্রোহী এমপিরা হয়তো অবস্থান বদলাবেন।
জনসন বলেছেন, অক্টোবরে নির্বাচনের প্রচেষ্টা চালানো ছাড়া তার কিছু করার নেই। কারণ তিনি বলছেন, দেশের জনগণকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদিও এটিও তার জন্য খুব একটা সহজ হবে না।
কারণ ব্রিটেনে ২০১১ সালের একটি আইনে পার্লামেন্টকে পাঁচ বছরের মেয়াদ দেয়া হয়েছে। এখন সেটি পরিবর্তন করতে হলে সংসদে বরিস জনসনের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে।
এটি পেতে হলে তার বিরোধী দল লেবার পার্টির সমর্থন দরকার হবে। সেটি জনসনের জন্য খুব একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভোটের ফলের কারণে আজ এমপিরা হাউস অব কমন্স নিয়ন্ত্রণ করবেন। এর ফলে তারা ব্রেক্সিট ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিলম্বিত করার প্রস্তাব দিতে প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করতে বিল আনার সুযোগ পাবেন। তবে সেটি তখনি ঘটবে যদি এমপিরা ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিটের জন্য একটি নতুন চুক্তি অনুমোদন বা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট না দেন।

ধারণা করা হচ্ছে, সরকার ১৫ অক্টোবর একটি সাধারণ নির্বাচন করতে চান। তার দুদিন পরেই ব্রাসেলসে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পক্ষে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর নেই। তিনি মন্তব্য করেন, ভোটাভুটি হওয়ার আগেই এই বিল পাস হওয়া উচিত ছিল।
এখন পর্যন্ত ২১ টোরি এমপি, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও রয়েছেন, তারা সরকারকে হারাতে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
তবে বিরোধীদের এখন দাবি, ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ বা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট যেন না হয় সেটি আগে নিশ্চিত করা, তারপর যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি।
উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর নতুন নেতা তথা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
খবর বিবিসি