‘তারিখ’ রিভিউ : মৃত্যুর পরেও থেকে যায় স্মৃতির টাইমলাইন

SHARE

বছর তিন-চারেক আগে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের একটি বিশেষ দিক সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়। সে সময় দেশি-বিদেশি একাধিক মাধ্যমে সমালোচিত হতে শুরু করে ফেসবুকের মতো নেটওয়ার্কিং সাইট।

বলা হয়, স্বল্প সময়ের মধ্যে এগুলো হয়ে উঠবে ভার্চুয়াল কবরখানা। জীবন ফুরিয়ে গেলেও ভার্চুয়াল স্পেসে থেকে যাবে মানুষের অসংখ্য স্মৃতি। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম কীভাবে মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে বিমুখ করে তুলছে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ‘তারিখ’ সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করে, সম্পূর্ণ অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার কথা বলে সোশ্যাল মিডিয়াকে।

শাশ্বত, ঋত্বিক, রাইমা অভিনীত এবং চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘তারিখ’ এমন একটি মন ছুঁয়ে যাওয়া সম্পর্কের গল্প, যা বোনা হয় বাস্তব ও ভার্চুয়াল জীবনের স্মৃতির টানাপোড়েনে।

অপেরা মুভিজ প্রযোজিত এই সিনেমা বলে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে দূরে সরায় না, বরং বাস্তব জীবনের প্রত্যেকটা তারিখ, সময়, ঘণ্টা-মিনিট যে কতটা অমূল্য, তা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাবটেক্সট রয়েছে এই সিনেমায়, যা দক্ষতার সঙ্গেই তুলে ধরেছেন পরিচালক-চিত্রনাট্যকার। আদর্শবাদী বুদ্ধিজীবীর পলায়নপ্রবণতা, ভাবনার বিরোধাভাস থেকে ব্যক্তিগত সুখ-অসুখের দোলাচল, পুরুষতান্ত্রিক ঘেরাটোপ, প্যারালাল সম্পর্ক – অনেক কিছুই উঠে এসেছে চলচ্চিত্রটিতে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই চলচ্চিত্রে স্মৃতির সংরক্ষণ দিয়ে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাওয়ার কথা বলে।

দৃশ্যধারণ ও সম্পাদনা একেবারেই সময়োপযোগী। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় চলচ্চিত্রটির সম্পাদনার বিষয়। চলচ্চিত্রের সেরা ট্রিটমেন্ট, কফিনবন্দি হয়ে মৃত চরিত্রের তার শহরে ফিরে আসা। সেখানে ক্যামেরা হয়ে ওঠে তার চোখ। কফিনের ঘেরাটোপ ভেদ করে সে যেন দেখছে তার শহরকে, চিৎ হয়ে শুয়ে, আকাশের দিকে চেয়ে। সঙ্গীত পরিচালনা এবং আবহ বেশ ভালো। রূপঙ্করের কণ্ঠে ‘বন্ধু’ গানটিও দারুণ। বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী এই ছবির গল্পের সূত্রধর, তাদের উপস্থিতি ও স্বকণ্ঠে গান এই ছবির মাধুর্যকে বাড়িয়ে তোলে।

আসলে এই সিনেমায় তো প্রবীণ প্রজন্মের উপলব্ধি থেকে পরের প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা, তাই মৃত্যুকে পেরিয়ে জীবনের বহমানতা এবং তারুণ্যকে বারবার ফিরিয়ে এনেছেন পরিচালিক। শাশ্বত চট্টোপাধ্য়ায়, রাইমা সেন এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী, তিন তারকাই অভিনয়ে সাবলীল। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অলকানন্দা রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়, অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্য়ায়, জুন মালিয়া, অনসূয়া মজুমদারের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং শিশুশিল্পী অ্যাডোলিনা।

একটি বিষয়ে শুধু খটকা রয়ে গেল। সাধারণত কোনো ইউজার মৃত, এই সংবাদটি ফেসবুকের কাছে এলে, ফেসবুক তা নিশ্চিত করতে কিছুদিন সময় নেয়। পরে তার নামের সঙ্গে রিমেমবারিং শব্দটি জুড়ে দেয়। বাংলায় এই প্রোফাইলগুলোকে স্মরণীয় প্রোফাইল বলা হয়। ছবির একেবারে শুরুর সিক্যুয়েন্সে এবং শেষে, যখন কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রায় দু’বছর আগে মৃত, সেই সময়েও কিন্তু তার প্রোফাইল নামের ঠিক উপরে রিমেমবারিং শব্দটি চোখে পড়ল না। শুধু তাই নয়, লেগাসি কনট্যাক্ট নির্বাচনের প্রসঙ্গটিও ছবির গল্পে কোনোভাবে বুনে দেওয়া গেলে ভালোই হতো।