বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা তদন্তে সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি

SHARE

বিমান হাইজ্যাক চেষ্টার ঘটনা তদন্তে সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে সংসদে। একইসঙ্গে যাত্রীদের নিরাপদে অবতরণ এবং সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার স্বীকৃতি হিসেবে ওই বিমানের পাইলট, কো-পাইলট ও ক্রুদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করার দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশসে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লো নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বিষয়টির অবতারণা করেন।

তিনি বলেন, এইভাবে কোনো ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে বিমানে ঢুকতে পারে না। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সেখানে কি করে? বিষয়টিকে আমরা সহজভাবে নিতে পারি না। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যেন ভবিষ্যতে আর এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। সরকারিভাবে যদি তদন্ত হতে হয় তাহলে অন্তত সচিবের নিচে কাউকে তদন্ত কমিটির প্রধান করলে তিনি বলেন, বিমানের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি ও জাতির সুনাম জড়িত। সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে এই সংসদকে বিস্তারিত জানাতে হবে। নইলে মানুষ এই বিমানে আর উঠবে না, বিমান লোকসানে যাবে।

এরপর ফ্লোর নিয়ে বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে দেখলাম বলা হয়েছে আমি নাকি ওই বিমানের যাত্রী ছিলাম। আমি ওই বিমানের যাত্রী ছিলাম না। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে আমি ওই বিমানবন্দরে এসেছিলাম ঢাকায় ফেরার জন্য। সেখানে তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরও উপস্থিত ছিলেন। আমরা দু’জন সিদ্ধান্ত নিলাম, সংসদ সদস্য হিসেবে বিষয়টি তদারকি করা আমাদেরও কর্তব্য। এজন্য আমরা একেবারে টারমাকে ঢুকে পড়ি এবং একেবারে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকি।

নিজের দেখা ঘটনা ও পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ওই সংসদ সদস্য বাদল বলেন, আমার ফাইন্ডিং হল- একজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি বিমানে পেছন দিক থেকে গালাগালি করতে করতে সামনে দিকে আসতে থাকে। সে পাইলটকে দরজা খুলতে বলে। পাইলট দরজা খুলেননি। পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে পাইলটের সঙ্গে অনেককিছু হয়েছে। না, পাইলটের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ হয়নি। পাইলট তার সঙ্গে কথা বলে তাকে ব্যস্ত রাখার কৌশল নেন। পাইলট অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও সাহসের সাথে বিমান অবতরণ করেন। বিমানের ক্রুদেরও পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহসী ভূমিকা ছিল। ক্রুরা ইকোনমি ও বিজনেস সিটের মাঝখানে পর্দা লাগিয়ে দেন। বিমানটি অবতরণের পর বিমানের ডানার পাশে থাকা জরুরি নির্গমণ পথ দিয়ে যাত্রীদের বের করে আনা হয়। পরে পাইলট যখন বেরিয়ে আসেন তার সঙ্গে আমার কথা হয়। পাইলট বললেন, ভেতরে ওই ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ নেই, এখন অপারেশন চালানো যায়। পরে সেনাকমান্ডো অফিসার আমাকে জানান, ভেতরে ওই ব্যক্তি অফেসনিভ নিয়েছে, যার কারণে তার সঙ্গে আমাদেরকে নেগোসিয়েশনে যেতে হয়েছে। এরপর অপারেশনে ওই ব্যক্তি নিহত হয়।

এমপি মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, এদেশে রিয়েল হিরোরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান না। পাইলট, কো-পাইলট ও ক্রুরা অসীম সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কবাছে আবেদন জানাবো, তাদেরকে পুরস্কৃত করা উচিত। অপারেশন শেষ করে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিটের মাথায় বিমানবন্দর আবার চালু করে দেওয়া হয়েছে। এখানে বোঝা যায়, এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দ্রুত বিমানবন্দর খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের পারদর্শিতা অর্জিত হয়েছে। একইসঙ্গে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাহসী ভ’মিকার জন্য ফায়ার ব্রিগেডের সংশ্লিষ্ট সদস্যদেরও পুরস্কৃত করতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, রুস্তম আলী ফরাজী ও বাদলে বক্তব্যের আগে কার্যপ্রণালী বিধি ৩০০ বিধিতে সংসদে দেওয়া এক বিবৃতিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বলেন, পাইলট অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, পেশাদারিত্বে সাথে কুচক্রীকে কশোপকথনে ব্যস্ত রেখে দ্রুত নিরাপদে বিমানটি অবরণ করতে সক্ষম হন। যার ফলে সকল যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারেন। পরে অপারেশনে ওই কুচক্রীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।