পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত এবং অত্যাধুনিক বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র বানিয়েছে চীন। সামরিক শক্তির বিচারে সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ, ইন্টারনেট—সব ক্ষেত্রেই নিজেদের অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরই মধ্যে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বেইজিং। ভারত মহাসাগরজুড়েও ক্রমাগত নিজেদের আধিপত্য বাড়িয়ে চলেছে তারা। খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের অভাবনীয় শক্তির ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তাইওয়ানের ওপর সামরিক অভিযানও চালাতে পারে চীনের সেনারা, অর্থাৎ পিপলস লিবারেশন আর্মি। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন সামনে এনে দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর চীনকে নিয়ে এই আশঙ্কার কথা জানাল।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রতিবেদনে বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে চীনের অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ কয়েক দশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছে চীন। মার্কিন গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর, অর্থাৎ উৎপাদনশিল্পে চীন সারা পৃথিবীর ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা থেকেই এই এগিয়ে যাওয়ার শুরু। কম খরচে এবং ভালো পরিকাঠামোতে উৎপাদনের আকর্ষণে সারা পৃথিবীর তাবৎ কম্পানির গন্তব্য এখন চীন। তাতে কম্পানিগুলোর মুনাফা হলেও চীনের কাছে চলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়েই এখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্রের অধিকারী হয়ে গেছে চীন। বেইজিংয়ের দ্রুতগতিতে সামরিক উত্থানের পেছনে এই যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছেন মার্কিন সামরিক গোয়েন্দারা।
যদিও মার্কিন গোয়েন্দাদের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ ‘হাইপারসনিক’ যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে। এই যুদ্ধাস্ত্র শব্দের থেকে কয়েক গুণ বেশি গতিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানে। গতি অত্যন্ত বেশি হওয়ায় কোনো রাডার বা সেন্সরে এই যুদ্ধাস্ত্রকে চিহ্নিত করা যায় না। তাই এই যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে কাজ করে না অনেক ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থাই। উন্নতমানের হাইপারসনিক যুদ্ধাস্ত্র হাতে এলে নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে চীনের সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি, এমনটাই আশঙ্কা মার্কিন গোয়েন্দাদের।
পেন্টাগন প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে পিপলস লিবারেশন আর্মির হাতে এখন আছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা সব যুদ্ধাস্ত্র। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওরাই শ্রেষ্ঠ। সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ, ইন্টারনেট—সব ক্ষেত্রেই নিজের এলাকায় শ্রেষ্ঠ এখন বেইজিং।’ পাশাপাশি যুদ্ধবিমান বানানোর ক্ষেত্রেও অভাবনীয় উন্নতি করেছে চীন। মাঝারি এবং দূরপাল্লার বোমারু বিমান তৈরিতেও এখন একেবারে প্রথম সারিতে চীন। ২০২৫ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সফল উড়ান সেরে ফেলার লক্ষ্যে এখন কাজ করছেন চীনা প্রযুক্তিবিদরা। সেই লক্ষ্যে সফল হলে আকাশের লড়াইতেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে ফেলবে চীন।
শুধু আকাশ নয়, ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণও নিজের কবজায় রাখতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। সেই নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিজেদের উপকূল ছাড়িয়ে এখন তারা নজর দিয়েছে বিভিন্ন বিদেশি সমুদ্রবন্দরে। পাকিস্তানের গোয়াদর এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর এখন আক্ষরিক অর্থেই চীনা নিয়ন্ত্রণে। বিনিয়োগ ও উন্নয়নের আড়ালে এই বন্দরগুলোতে এখন চীনা প্রাধান্য প্রশ্নাতীত। পাশাপাশি বেইজিং প্রভাব বাড়াচ্ছে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দরেও।
মার্কিন সামরিক গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ ৪০ বছর ধরে সামরিক ক্ষেত্রে শুধুই অগ্রগতি হয়েছে চীনের। কিন্তু সত্যিকারের যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা নেই পিপলস লিবারেশন আর্মির। সেই কথা খুব ভালো করেই জানেন চীনা সামরিক কর্মকর্তারা। সেই কারণে সত্যিকারের যুদ্ধের মহড়া হিসেবে তারা বেছে নিতে পারে তাইওয়ানকে। এমনটাই আশঙ্কা মার্কিন গোয়েন্দাদের। কারণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বন্ধু দেশ তাইওয়ান। দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের উপস্থিতির জন্য তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল মার্কিন নৌ সেনা। অন্যদিকে পূর্ব আর দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝে এই দ্বীপের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেয় না বেইজিং। এই মুহূর্তে তাইওয়ান স্বায়ত্তশাসিত। নিজেদের আলাদা পতাকা, মুদ্রা এবং সরকার থাকলেও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ বলে মেনে নেয় না জাতিসংঘও। এর আগে বেইজিং প্রকাশ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা যুদ্ধ করতে পিছপা হবে না। তাই নিজেদের সামরিক শক্তির সক্ষমতা যাচাই করতে তাইওয়ানকেই প্রথম যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে পারে চীন। মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে সেই সময় প্রায় আগত। সূত্র : সিএনএন, এএফপি।