বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্লাহর এবারের পরাজয়কে খোদ দলীয় নেতকর্মীরাই তার রাজনৈতিক অপমৃত্যু বলে দাবি করেছেন। ‘আওয়ামী লীগের নৌকা নয়, ব্যক্তি কাজী জাফরউল্লাহর পরাজয় হয়েছে এ আসনে।’ জনগণ শুধু নৌকার মাঝি পরিবর্তন করে আওয়ামী পরিবারের সন্তান নিক্সন চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর ৪ আসনে (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহকে স্বতন্ত্রভাবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এই আসনটিতে ছয়টি সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কাজী জাফরউল্লাহ নির্বাচিত হন ২০০১ সালে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাচন করতে না পারায় স্ত্রী নিলুফার জাফরউল্লাহ নির্বাচন করে বিজয়ী হন।
বারবার নির্বাচিত হয়েও এলাকার মানুষের কোন উন্নয়ন, কোন খোঁজ-খবর না রাখা ও জনবিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিকটতম আত্মীয় ও নেতাদের নানা বিতর্কিত ভূমিকার কারনে নির্বাচনে পরাজিত হন। সে সময় কাজী জাফরউল্লাহর নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিয়ে কোটিপতি হওয়া এমন অনেক নেতাই এখন তার সঙ্গে নেই।
নিক্সন চৌধুরী জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক দুরদর্শিতার কারণে অনেকে যোগ দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে। ফলে আবারো পরাজয় হলো কাজী জাফর উল্লাহর এমনটাই মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কাজে না আসা, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, সাধারণ জনগণ থেকে দূরে থাকার কারনেই এই নেতাকে ফরিদপুর-৪ আসনের সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার জবাব ব্যালটেই দিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ঘাটি ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) এর মানুষ হেভিওয়েট নেতা কাজী জাফরউল্লাহকে প্রত্যাখ্যান করে গ্রহন করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার আওয়ামী পরিবারের সন্তান মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে। তিনি সাবেক সংসদ মরহুম ইলিয়াছ চৌধুরী ছেলের ও হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের ভাই।
ওই আসনের চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক মাস্টার বলেন, ‘কাজী জাফর উল্লাহ রাজধানীর গুলশান বনানী ধানমন্ডির নেতা। তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে তিনি একেবারে বিচ্ছিন্ন। সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি বুকে মেলা তো দূরের কথা, হাতটা পর্যন্ত মেলাতে চান না। সেই নেতা কিভাবে নির্বাচনে জয়ী হবেন। অপরদিকে নিক্সন চৌধুরী পাশের জেলা থেকে এসে ব্যাপক উন্নয়নের কাজের পাশাপাশি ভালো আচার আচরনের কারণে এই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের মানুষে পরিণত হয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্নতাই কাজী জাফরউল্লাহর পরাজয়ের কারণ। আর এই পরাজয় তার তার রাজনৈতিক অপমৃত্যু হয়েছে। তার আর এখন এই এলাকায় রাজনীতি না করাই মঙ্গল।’
সদরপুর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নেতাকর্মীদের কোন দাম নেই কাজী জাফরউল্লাহর কাছে। সেখানে নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তিনি দলের কর্মীদের ভালবাসেন। বিপদে আপদে পাশে থাকেন। এই কারণে এই আসনে কাজী জাফর উল্লাহর পরাজয় হয়েছে। তিনি কোনদিনই আর এই আসনে আর রাজনীতি করতে পারবেন না। তৃণমূলের কাছে তার সেই গ্রহনযোগ্যতা নেই।’
ভাঙ্গা উপজেলার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাস বলেন, ‘এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজী জাফরউল্লাহ কাছে নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও এই এলাকার দায়িত্বে থাকার পরও উন্নয়নের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে তার এই এলাকার রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কা নয় আমরা শুধু মাঝি পরিবর্তন করেছি। নিক্সন চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুরই রক্ত। প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা আগামীতে যেন তাকেই মনোনয়ন দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।’
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমি গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়ন করেছি। তিন উপজেলার মানুষকে ভালবাসা দিয়েছি। তারা ব্যালটের মাধ্যমে আমাকে মূল্যায়ন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আমি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র। এই এলাকার মানুষ আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছে, আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি এই এলাকার মানুষের উন্নয়নের কাজ করে যাবো।’