জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মরে গেলেও আমরা নির্বাচন বর্জন করব না। আমার লাশ নিয়ে ভোট দিতে যাবে। আমি মরে গেলেও আমার আঙুল তো থাকবে। আঙুল ভোট দেবে।
আজ সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ইসির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।
ড. কামাল বলেন, ইলেকশন হতে হবে। তারা (আওয়ামী লীগ) যদি মনে করে, এসব জঘন্য ধরনের আক্রমণ করলে আবেগে আমরা নির্বাচন করব না। এটা আমরা করব না। আমার লাশও করবে না।
তিনি বলেন, আমরা উনাদের (ইসি) তথ্য দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বললাম- পুরো দেশে উত্তর-দক্ষিণ সব জায়গা থেকে অভিযোগগুলো পেয়েছি। পেশিশক্তি নিয়ে প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। যারা নির্বাচনে কাজে নেমেছে তাদের ওপরই আক্রমণ হচ্ছে। কেউ পোস্টার লাগতে পারছেন না। বক্তব্য রাখতে পারছেন না। বিভিন্ন জায়গায় একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। যারা নির্বাচন করার জন্য এগিয়ে এসেছেন তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য এসব করা হচ্ছে। এটা খুব ভয়াবহ।
গণফোরামের সভাপতি বলেন, আমার তো ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম ৭০ এ। তখন থেকে এখন সব নির্বাচনই ভালোমেন্দ দেখেছি। কিন্তু এ অবস্থা কোনো দিন দেখি নাই। যারা প্রার্থী, আমরা তাদের লিখিত তালিকা (ইসিতে) দিয়েছি। বেশ কিছু কেস- যেখানে সময় স্থানের ছবি দিয়েছি। গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার খোকন, রোমনার ছবি দিয়েছি। একজন দুই চোখ হারিয়েছেন, সেই মহিলা ছবি দিয়েছি। আ স ম আবদুর রবের ভাঙা গাড়ির ছবিও আমরা দিয়েছি।
তিনি দাবি করেন, এসব ঘটনার কিছু কিছুতে সিইসি বিব্রত হয়েছেন। বিব্রতবোধ করা যথেষ্ট নয়। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা তাদের বলেছি- এখনই আপনারা ইনকোয়ারি চান, একদিনের মধ্যে রিপোর্ট নেন, পদক্ষেপ নেন- যাতে বুঝতে পারি নির্বাচন কমিশন দেশকে মুক্ত করতে চায়, যাতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ আমরা পাই।
ড. কামাল বলেন, এক দলের পোস্টার ছাড়া অন্য কোনো দলের পোস্টার দেখা যায় না। এটা আমি জীবনে দেখিনি। শুধু এক দল মাঠে থাকে, অন্য দল মাঠে নামতে পারে না। আমি যতদিন বেঁচে থাকি এ কথাগুলো বলে যাব। আপনাদের সামনে বলব, মানুষের সামনে বলব। প্রতিকার দাবি করব। মানুষের ভোটাধিকারের ক্ষমতার কথা বলব। লাখো লাখো শহীদ সেই ক্ষমতা দিয়ে গেছেন- সেটা থেকে যেন জনগণ বঞ্চিত না হয়। এখন যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত। এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ইসি সেই ক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ৩০ তারিখের (ডিসেম্বর) পর ইনকোয়ারির কোনো অর্থ থাকবে না। একদিনের মধ্যে রির্পোট চেয়ে পরশুর মধ্যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সেটা আমরা মনে করি। সংবিধান অনুযায়ী ইসির ক্ষমতা আছে, কিন্তু উনারা প্রয়োগে করছেন না।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম রব বলেন, আজ থেকেই আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল হোসেন ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. মইন খান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মিন্টু, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।