স্ত্রীসহ পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ড কমানোর কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যায় আদালত বলেন, পাঁচটি কারণে ঐশীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে।
এক. হত্যাকাণ্ডের সময় ঐশী মাদকাসক্ত ছিলেন। ১৪ বছর বয়স থেকেই তিনি সিসা, ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করতেন।
দুই. ঐশী বংশগতভাবে মানসিক রোগী। তার চাচা-দাদি-খালা অনেকের মাঝেই মানসিক রোগের লক্ষণ আছে, যা তার মাঝেও ছোটবেলা থেকে বিদ্যমান।
তিন. হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দ্বিতীয় দিনের মাথায় তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
চার. ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। এ বয়সের একটি সন্তানকে তার বাবা-মা যথাযথ দেখভাল করেননি। ফলে ঐশী ছোটবেলা থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন।
পাঁচ. ঐশীর বাবা-মা দুজনেই সন্তানের লালনপালন বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। যে কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি স্নেহবঞ্চিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
আর এই পাঁচ কারণ আমলে নিয়ে আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এর আগে গত ৭ মে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন তাদের মেয়ে ঐশী রহমান গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। দুটি খুনের জন্য পৃথক দুটি অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলার বিচার শেষে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
দুটি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা করে ঐশীকে দুইবার ফাঁসি ও দু’বারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।