বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে তা সক্ষমতার চেয়ে কম গতিতে। বাংলাদেশ সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে এ কথাই বলেছে বিশ্ব ব্যাংক।
পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার শঙ্কার কথাও জানিয়েছে এ সংস্থা। তবে দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ ভালো করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তার সঙ্গে সংস্থার বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জোহানসেন জাটও ছিলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ সালমান জেইদি, রিসার্চ অ্যানালিস্ট নাদিম রিজওয়ান ও যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চললেও সম্ভাবনার সবটুকু ব্যবহার করতে এখনও পারছে না বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতির কথা বললেও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এক বছর আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে সময় লাগত; এখন তার চেয়ে বেশি সময় লাগে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
এদিকে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। যদিও বহু বিতর্কের পর ওই সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় এ সংস্থা।
প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে। তবে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে তারা।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, চলতি ২০১৪ সালে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে আসবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে ছিল। ২০১০ সালে ছিল ৩১ শতাংশ।
দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নেও বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছে বিশ্ব ব্যাংক। বলা হয়েছে বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি বাড়ায় বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান রেখেছে। ২০১৩ সাল শেষে কর্মসংস্থান বেড়ে ৫ কোটি ৬৫ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সরকার অবশ্য চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ‘সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির জন্য বর্তমানের ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ (জিডিপির) ৩৪ থেকে ৩৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।
জাহিদ হোসেন আরো বলেন, বর্তমানে ২২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। এটি খুবই সন্তোষজনক। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
প্রতিবেদনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতদিন স্থিতিশীল থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে প্রভাব ফেললে অর্থনীতি ফের নেতিবাচক ধারায় যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এতে চাপে পড়তে পারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ।
এদিকে তৈরি পোশাক কারখানার সমস্যা ইউরোপের বাজারে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উল্লেখ করে এই শিল্পের পরিবেশ উন্নত করতে নেওয়া পদক্ষপ দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করলেও এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে। এতে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো খাতের চার প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে নিয়ে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানসেন জাটও তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বব্যাংক বর্তমানে ইবোলা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে। তাছাড়া আগামীতে বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থায়ন গ্যাপ কীভাবে কমানো যায় ও জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান কীভাবে করা যায় সে জন্য ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি তৈরি করা হচ্ছে।