সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ না থাকলে কী হবে?

SHARE

২৪আওয়ার রিপোর্ট : ষোড়শ সংশোধনী অনুসারে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে এ বিষয়ে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে তখন কী হবে বলে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
বৃহস্পতিবার বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ সপ্তম দিনের মতো শুনানি হয়।

বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ তার লিখিত বক্তব্য দেন।

শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শাসনতন্ত্রের সবচেয়ে পবিত্র আইন তারা সংরক্ষণ করেন। এখানে এমন কিছু সন্নিবেশিত করা হল, যাতে শূন্যতা সৃষ্টির সুযোগ আছে! কারও (বিচারক) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (সংসদে) না থাকলে তখন কী হবে (বিচার বিভাগের)! এটি ভাবিয়ে তুলেছে।’

জবাবে রোকন উদ্দিন মাহমুদ জানান, লিখিত বক্তব্যে তিনিও একই ধরনের শূন্যতার প্রসঙ্গ তুলেছেন।

এরপর আদালত বলেন, ‘এখন না হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। কিন্তু কোনো সময় যদি না থাকে? যদি ঝুলন্ত (হ্যাঙ্গিং) পার্লামেন্ট হয়, তাহলে কী হবে? কীভাবে অপসারণ করা হবে? তখন তো একটা শূন্যতা (ভ্যাকুয়াম) সৃষ্টি হবে।’

জবাবে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার লিখিত সাবমিশনে এটা আছে। আমি নিজেও এ প্রশ্ন তুলেছি।’

এর আগে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বক্তব্য দেন এবং অপর অ্যামিকাস কিউরি টি এইচ খানের পক্ষে তার ছেলে আফজাল এইচ খান লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাদের লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দিতে বলেন আপিল বিভাগ।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ আইনজীবী হচ্ছেন, বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল হক কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর ৮ মে শুনানি শুরু হয়। এরপর ৮, ৯ এবং ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ মে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।