হার দিয়ে টি২০ সিরিজ শুরু টাইগারদের

SHARE

ম্যাচের আগেই বাংলাদেশের মন খারাপ হওয়ার খবর—টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা মাশরাফি বিন মুর্তজার। সতীর্থেরা উজ্জীবিত লড়াই করতে পারতেন। কিন্তু হলো না। কলম্বোর প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। মাশরাফিরা হেরেছেন ৬ উইকেটে। ১৫৬ রানের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কা ৭ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়েছে।

দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনারই তুলে ফেলেন ৪১ বলে ৬৫ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে উপুল থারাঙ্গাকে (২৪) ফেরান মাশরাফি। ১৪ রানের মধ্যে বাংলাদেশ অধিনায়ককে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দিলশান মুনাবীরাও (৮)। কিন্তু কুশল পেরেরা-আসেলা গুনারত্নের তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করা ৪১ রানে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার শেষ সম্ভাবনাটুকুও মুছে যায়। ৬ এপ্রিল সফরের শেষ ম্যাচটা জিতলে টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও ড্র হবে। মাশরাফির শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ! টি-টোয়েন্টিতে এটি যে টানা অষ্টম পরাজয় বাংলাদেশের!
বাংলাদেশের সঙ্গে আগের তিন টি-টোয়েন্টির দুটিতেই ৬৪ রানের দুটি ইনিংস খেলেছিলেন কুশল পেরেরা। আজও একই রানে ফিরতে পারতেন শ্রীলঙ্কান ওপেনার, যদি সাইফউদ্দিনের বলে তাসকিন আহমেদ শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচটা জমাতে পারতেন। তাসকিনের শিকার হওয়ার আগে পেরেরা ৫৩ বলে ৭৭ রান করে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন নিরাপদ জায়গায়। বাংলাদেশ ব্যবহার করেছে সাত বোলার। ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার মাশরাফিই।
এ মাঠে এই প্রথম পরে ব্যাট করে জিতল শ্রীলঙ্কা। অতীত রেকর্ড বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছিল ম্যাচের মাঝপথে। যদিও বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত স্কোর করতে পারেনি।
স্কোরকার্ডে কোনো রান জমা না হতেই লাসিথ মালিঙ্গার ইয়র্কারে তামিম ইকবাল (০) বোল্ড হওয়ার ধাক্কাটা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিলেন সাব্বির রহমান-সৌম্য সরকার। এই জুটিটা যেভাবে এগোচ্ছিলে বড় স্কোর পেতেই পারত বাংলাদেশ। কিন্তু তা হয়নি। বাংলাদেশ করতে পারে ৬ উইকেটে ১৫৫ রান।
অথচ ৫ ওভার শেষেও বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৫৭। ষষ্ঠ ওভারে জোড়া ধাক্কায় ফিরলেন সাব্বির-সৌম্য দুজনই। দুই ওভার পর ফিরলেন মুশফিকও। ২০ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা সামলে নিতে নিতেই ফুরিয়ে গেল ২০ ওভার। শেষে আর ঝড় তোলা তাই হয়নি।
তামিম ফিরে যাওয়ার পর ওই ওভারের শেষ বলে মালিঙ্গাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সৌম্য সরকার। তবে এর পর মালিঙ্গাকে দারুণ খেলেছেন সাব্বির-সৌম্য। প্রথম ওভারে ৬ রান দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান পেসার, নিজের দ্বিতীয় ওভারেই এসে দিলেন ১৭ রান! ২ ওভারে ২৩।
নুয়ান কুলাসেকেরাও পাত্তা পাচ্ছিলেন না। প্রথম ৫ ওভারেই তাই বাংলাদেশের রান ৫৭। ২৯ বলে ৫৭ রান যোগ করা সৌম্য-সাব্বিরের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই, সাব্বিরের দুর্ভাগ্যজনক এক রান আউটে। দোষটা সাব্বিরেরই, ভিকুম সঞ্জয়ার বলটা কাভারে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন। দিক না বদলে সোজা দৌড়ালেই বেঁচে যেতেন বোলিং প্রান্তে সেকুগে প্রসন্নর সরাসরি থ্রো থেকে। ১৪ বলে ১৬ রান করে সাব্বির ফেরার পর ওই ওভারের পঞ্চম বলে থিসারা পেরেরার হাতে ক্যাচ দিলেন সৌম্যও (২০ বলে ২৯)। ওই ওভারটা থেকে এল মাত্র ১ রান । বাংলাদেশেরও ছন্দটা যেন কেটে গেল তাতে।
পরপর দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে নেবেন কী, মুশফিক নিজেও বেশিক্ষণ টিকলেন না। আসেলা গুনারত্নেকে স্কুপ করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে গেলেন। ১ উইকেটে ৫৭ থেকে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ৭০ হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে। নবম ওভারে গুনারত্নের হাতেই পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে সাকিব ফিরলেন ১৫ বলে ১১ রান করে।
বাংলাদেশকে যা একটু আশা দিল মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক হোসেনের ষষ্ঠ উইকেটে তোলা ৪২ বলে ৫৭ রানের জুটি। মালিঙ্গার আরেকটি ইয়র্কারে মাহমুদউল্লাহ বোল্ড ২৬ বলে ৩১ রান করে। মোসাদ্দেক অপরাজিত ৩০ বলে ৩৪ রানে। শেষ চার ওভারে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ৩২ রান। স্কয়ার লেগে মালিঙ্গাকে সৌম্যর ফ্লিক করে মারা ছক্কাটাই বাংলাদেশের একমাত্র ছয়।
টি-টোয়েন্টিতে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং না করেও ম্যাচ জেতা যায়। তবে সেটির জন্য চাই দুর্দান্ত বোলিং। বাংলাদেশের আজ কোনোটিই হয়নি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৫/৬ (মোসাদ্দেক ৩৪*, মাহমুদউল্লাহ ৩১, সৌম্য ২৯, সাব্বির ১৬, সাকিব ১১, মাশরাফি ৯*, মুশফিক ৮, তামিম ০; মালিঙ্গা ২/৩৮, প্রসন্ন ১/১৯)।
শ্রীলঙ্কা: ১৮.৫ ওভারে ১৫৮/৪ (কুশল ৭৭, থারাঙ্গা ২৪, গুনারত্নে ১৭; মাশরাফি ২/২৬, মোস্তাফিজ ০/২৪, তাসকিন ১/৩৩, সাকিব ০/২৯, সাইফউদ্দিন ০/২৩)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।