মুস্তাফিজকে হারিয়ে তামিমকে পাওয়া

SHARE

tamim_103998
পাকিস্তান ম্যাচের আগে দুই দিনের বিরতি। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কাল তাই কোনো অনুশীলন রাখলেন না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেকে সকাল সকাল চলে গেলেন বাসায়। অন্যরা হোটেলেই অখণ্ড অবসরে ডুব দিলেন। শুধু মুশফিকুর রহিম আর সৌম্য সরকার দুপুরের দিকে এলেন মিরপুরের ইনডোরে। ব্যাটিং অনুশীলনে তাঁদের সঙ্গী হাথুরুসিংহে।
ছুটির দিনেও দু-একজন খেলোয়াড়ের অনুশীলন নতুন কিছু নয়। মুশফিকের বেলায় তো এটা নিয়মিত ঘটনাই। তবে মিরপুরের ইনডোরে কাল তামিম ইকবালকে দেখা যাবে, সেটা কারও কল্পনাতেও ছিল না। পরশু ব্যাংককে প্রথম সন্তানের মুখ দেখেছেন। মুঠোফোনে সেদিনই জানিয়েছিলেন, নবজাতক ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছে। এ সময়টা ভালোয় ভালোয় পার হলে পরবর্তী ফ্লাইটে ফিরে আসবেন দেশে। তাই বলে বিমানবন্দর থেকে সোজা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এসে ব্যাট হাতে অনুশীলনে নেমে পড়বেন! এশিয়া কাপের দলে না থেকেও কেন এত তাড়া তামিমের?
অনুশীলন শেষ করে কালো প্রাডো গাড়িতে ইনডোর ছেড়ে যাওয়ার সময়ও ব্যাপারটা খোলাসা করলেন না বাঁহাতি ওপেনার। তবে রহস্যের জট খুলতে সময় লাগল না। রাতে তো আনুষ্ঠানিকভাবেই বিসিবি জানিয়ে দিল, এশিয়া কাপের ১৫ জনের দলে না থাকলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলে নেওয়া হয়েছে তামিমকে। কারণ চোটে পড়ে দলের বাইরে চলে গেছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
তামিমের ফিরে আসা সুসংবাদ হলেও কাল স্টেডিয়াম এলাকায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ল মুস্তাফিজের চোটে পড়ার দুঃসংবাদটাও। পরশু ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই শরীরের ডান পাঁজরে ব্যথা অনুভব করেছেন বাঁহাতি পেসার। ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো কাল অ্যাপোলো হাসপাতালে এমআরআই করানোর পর। জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘এমআরআই রিপোর্টে রেডিওলজিস্ট নিশ্চিত করেছেন, মুস্তাফিজের ডান পাঁজরে গ্রেড-১ পর্যায়ের ব্যথা আছে।’ তবে তাঁর আশা, মুস্তাফিজ দ্রুতই আবার বোলিংয়ে ফিরবেন।
শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর থেকেই বাংলাদেশের সামনে ফাইনালের হাতছানি। ছুটির আবহে কালকের দিনটা তাই চনমনেই কাটছিল ক্রিকেটারদের। সেই চনমনে আবহে মুস্তাফিজের চোটের সংবাদ হয়ে এল দমকা হাওয়ার মতো। চোটটাও আবার নতুন! বিপিএল থেকেই এই পেসার বাঁ হাতের মাংসপেশিতে সমস্যা বোধ করছেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে না খেলার কারণও ছিল সেটা। স্লোয়ার-কাটারে সমস্যা হচ্ছিল বলে মাঝে অনুশীলনে শুধু গতির ওপর বল করে গেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে তো আর অস্ত্র গুটিয়ে রাখা যায় না! এশিয়া কাপে তাই কাটার ফিরে এসেছিল মুস্তাফিজের হাতে। তবে নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়াল পরশু পাওয়া পাঁজরের চোট।
সাদাচোখে দেখলে চোটে পড়ে বাইরে চলে যাওয়া একজনের জায়গায় তামিম দলে ঢুকতেই পারেন। কিন্তু মুস্তাফিজকে না খেলানোর সিদ্ধান্তের আগেই নবজাতক সন্তান আর স্ত্রীকে রেখে তাঁর তড়িঘড়ি ঢাকায় ফিরে আসা, বিমানবন্দর থেকে সোজা মাঠে চলে যাওয়া এবং দলের বাইরে থাকা একজন খেলোয়াড়ের প্রতি কোচ হাথুরুসিংহের মনোযোগ কৌতূহলোদ্দীপক বৈকি। তবে কি তামিমের এশিয়া কাপের দলে ঢোকাটা আগে থেকেই ঠিক করা? তামিমের দেওয়া ব্যাখ্যা অবশ্য সে কথা বলে না, ‘বিসিবি থেকে ছুটি নেওয়ার সময়ই জানিয়েছিলাম, সব ঠিকঠাক থাকলে বাচ্চা হওয়ার পর পরই আমি প্র্যাকটিসের জন্য দেশে চলে আসব। আমার আজ (গতকাল) আসাটা তাই আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।’
কিন্তু বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, মুস্তাফিজ চোটে পড়ার পর পরশু রাতেই ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ পর্যায় থেকে তামিমকে দেশে ফিরে আসার বার্তা দেওয়া হয়। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বলে বিসিবি শুরু থেকেই চাইছিল এশিয়া কাপে অন্তত দু-একটি ম্যাচ খেলুন তামিম। একই ইচ্ছা ছিল তামিমেরও। সে জন্যই ছুটির আবেদনপত্রে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর পরই দেশে ফিরে আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোচ হাথুরুসিংহে খণ্ডিত সময়ের জন্য কোনো খেলোয়াড়কে রাখতে না চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপের ১৫ জনের দলে রাখা হয়নি তামিমকে। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজের চোটই তাঁকে এশিয়া কাপে মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছে। এসিসির টেকনিক্যাল কমিটির কাছে কাল দুপুরে মুস্তাফিজের পরিবর্তে তামিমকে দলে নেওয়ার আবেদন করে বিসিবি। এসিসি বিকেলের মধ্যেই তাতে সম্মতি জানায়।
মুস্তাফিজকে হারানো নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ দলের বোলিং দুর্বল করবে। কিন্তু তামিমের যোগ হওয়া যে ব্যাটিং শক্তিতে টনিক হবে, সন্দেহ নেই তাতেও। এশিয়া কাপের ‘মুস্তাফিজ-তামিম অধ্যায়’ তাই শুধু হারানোর নয়, পাওয়ারও।