২০ দলীয় জোটে আরেক দফা ভাঙন!

SHARE

20 dolঢাকা: দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আরেক দফা ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জোটের বেশ কয়েকটি শরিকদল জোট থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আলাদাভাবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও গত ৭ বছরে অনুষ্ঠিত প্রায় সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে ওইসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে কেবল জামায়াতের সঙ্গেই প্রার্থিতা ভাগাভাগি করেছে বিএনপি।

এর ফলও হাতে হাতে পেয়েছে জামায়াত। সিটি নির্বাচনে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া জায়গাগুলোতে নিজেদের বিপুল সংখ্যক কাউন্সির প্রার্থী এবং উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জিতিয়ে এনেছে জামায়াত।

সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল থাকায় জোটের অন্য শরিকরা এবার বিএনপির কাছ থেকে প্রার্থিতার ভাগ চায়। এ ক্ষেত্রে বিএনপির কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেলে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে যার যার মতো নির্বাচনে অংশ নেবে তারা।

জানা গেছে, এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাগপা, বাংলাদেশ ন্যাপসহ অন্তত আটটি দল এককভাবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু অপেক্ষা খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের।  নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থান নেতিবাচক হলে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এসব দল।

সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি মনে করে- বিএনপি নির্বাচনে না গেলে নিজের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে দলীয় প্রার্থী জিতিয়ে নিয়ে আসার ক্ষমতা এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের আছে।

একইভাবে পঞ্চগড়ের স্থানীয় রাজনীতিতে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান একটা ফ্যাক্টর। তিনিও তার এলাকায় একক প্রার্থী দিয়ে জিতিয়ে আনতে পারবেন।  তাই বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে ২০ দলীয় জোটের ব্যানার ধরে বসে থাকতে নাও পারেন জাগপা প্রধান।

প্রয়াত মশিউর রহমান জাদু মিয়ার ইমেজ কাজে লাগিয়ে নীলফামারি থেকে দলীয় প্রার্থী জিতিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী জাদু মিয়ার নাতি বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি। বিএনপি স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করলে ২০ দলীয় জোটের এই শরিক দলটিও জোটের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিও স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার ঘোষণার দিকে তাকিয়ে থাকা জোটের এই দলটি এরই মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। কোনো কারণে যদি জোট নেতা নির্বাচন বয়কট করেন, তাহলে এককভাবে নির্বাচনে যেতে পারে দলটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ২০ দলীয় জোটে থাকা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। এখন জোট নেতা এ ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত দেন, সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে।  উনার সিদ্ধান্তের পর  হয়তো সবার অবস্থান জানা যাবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মাহসচিব এম এম আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে যেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে জোটের সিদ্ধান্তকেও আমরা ‍অগ্রাহ্য করতে পারব না। দেখি কি হয়।

সূত্রমতে, দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চায় ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দল।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার কয়েক দিনের মধ্যেই ২০ দলীয় জোটের অন্তত ৩টি শরিকদল ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহম্মদ নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদের সঙ্গেও বৈঠকের চেষ্টা চালায় ওই তিনটি দলের শীর্ষ নেতারা।

কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসার  সুযোগ পাননি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। তবে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি ২০ দলীয় জোট। দ্বিতীয়ত, জোট থেকে কেউ বেরিয়ে যাচ্ছে বা যেতে চাচ্ছে এমন খবর আমার কাছে নেই। এটা সরকারের অপপ্রচার হতে পারে।