সফরের দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচে ৫২ রানের জয় পেয়েছে দ. আফ্রিকা। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে সফরকারীরা ১৪৯ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় তামিম-সাকিব-মুশফিক-সৌম্যদের। তবে, প্রোটিয়াদের বোলিং তোপে পড়ে স্বাগতিকদের ইনিংস ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৯৬ রানেই থেমে যায়।
একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ফাফ ডু প্লেসিসের দল ১৮ ওভারে মাত্র ৯৯ রানে অলআউট করে দিয়েছিল বিসিবি একাদশকে। সেই বোলিং অ্যাটাককে চ্যালেঞ্জ জানাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো টাইগার বাহিনী। ০৭ জুলাই দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ একই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
সফরকারী দ. আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামেন টাইগারদের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। কাইল অ্যাবোটের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ব্যক্তিগত ৫ রান করা তামিম। পরের ওভারে রাবাদার করা বাউন্সে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ডুমিনির হাতে ধরা পড়েন সৌম্য সরকার (৭ রান)।
দলীয় ১৩ রানের মাথায় দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ব্যাট করছিলেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। তবে, ইনিংসের অষ্টম ওভারে ডুমিনির বলে মিলারের তালুবন্দি হন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান (১৯ বলে)। সাকিবের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি গড়েন মুশফিক।
এরপর দ্রুতই ফিরে যান সাব্বির রহমান (৪ রান) ও নাসির হোসেন (১ রান)।
টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া স্বাগতিকদের রানের চাকা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব। অভিষিক্ত লিটন দাসকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় থাকা সাকিবকেও অবশেষে ফিরিয়ে দেয় প্রোটিয়ারা। ৩০ বলে ২৬ রান করা সাকিব একটি করে চার ও ছয় হাঁকান।
এরপর রাবাদার বলে ভিলিয়ার্সের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন ৫ রান করা মাশরাফি। উইকেটে থেকে লিটন দাসকে সঙ্গ দিতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩ রান করে রানআউট হয়ে ফেরেন সোহাগ গাজী। একই ওভারে ২২ রান করা লিটনকে ফেরান ডেভিড উইসিস। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুস্তাফিজ করেন এক রান।
প্রোটিয়াদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন রাবাদা, উইসিস এবং ডুমিনি।
এর আগে মাঠে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করে বাংলাদেশ। দলীয় ৩১ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে বিদায় করে দেন স্বাগতিক বোলাররা। তবে, তিন নম্বরে নামা প্রোটিয়া দলপতি ফাফ ডু প্লেসিসের হার না মানা ব্যক্তিগত ইনিংসে ভর করে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে চার উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান সংগ্রহ করে দ. আফ্রিকা।
ডু প্লেসিস ৬১ বল মোকাবেলা করে ৮টি চারে অপরাজিত ৭৯ রান করেন। এছাড়া রিলে রুশো ৩১ রান (২১ বলে) করে অপরাজিত থাকেন। টাইগারদের হয়ে দুটি উইকেট পান আরাফাত সানি। একটি করে উইকেট তুলে নেন সাকিব ও নাসির।
টাইগারদের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে দ. আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাট হাতে প্রোটিয়াদের ইনিংস উদ্বোধন করতে আসেন কুইন্টন ডি কক ও এবি ডি ভিলিয়ার্স।
টাইগার দলপতি মাশরাফি ইনিংসের প্রথম ওভারটি করার জন্য বল তুলে দেন আরাফাত সানির হাতে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে দ. আফ্রিকান ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সকে সাজঘরের পথ ধরান সানি। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে লংঅফে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিলে পরের বলে কাভার পয়েন্টে মাশরাফির তালুবন্দি হন ভিলিয়ার্স।
প্রথম ওভারে সানির শিকারে দলীয় মাত্র দুই রানে মাথা নত করে সাজঘরে ফেরেন প্রোটিয়া ড্যাশিং ওপেনার ভিলিয়ার্স। নাসির হোসেনের করা দ্বিতীয় ওভারে সাত রান নেওয়া প্রোটিয়ারা তৃতীয় ওভারে নেন আরও নয় রান। চতুর্থ ওভারে নাসিরের বলে ভিলিয়ার্সের দেখানো পথে ফেরেন ডি কক। কাভার পয়েন্টে দাঁড়ানো লিটন দাসের তালুবন্দি হয়ে আউট হওয়ার আগে ডি কক ১২ রান করেন।
সানি-নাসির জুটির পর বোলিং আক্রমণে আসেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে বোলিংয়ে জুটি বাঁধেন গত ভারত সিরিজে টাইগারদের সফল বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিবের প্রথম ওভার থেকে প্রোটিয়ারা চার রান তুলে নেন। আর মুস্তাফিজের ওভারে মাত্র দুই রান তুলতেই দুইবার আউটের সম্ভাবনা জাগে।
দলীয় ৩১ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে সতর্ক থাকা প্রোটিয়ারা দলীয় ৭৭ রানে তৃতীয় উইকেট খুঁইয়ে ফেলে। নাসির হোসেনের লুফে নেওয়া অসাধারণ ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন জেপি ডুমিনি। সানির করা বারোতম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়াইড মিডঅনে নাসির লাফিয়ে ডুমিনির ক্যাচটি নেন। আউট হওয়ার আগে ডুমিনি ১৮ রান করেন।
ডুমিনির বিদায়ের পর ব্যাটিং ক্রিজে নামেন ডেভিড মিলার। তবে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ঘূর্ণি বলে কাবু হয়ে এলবি’র ফাঁদে পড়ে দ্রুত বিদায় নেন এক রান করা মিলার।
এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিষেক হয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাসের। আর রুবেল হোসেন, রনি তালুকদার ও জুবায়ের হোসেনকে এ ম্যাচে একাদশের বাইরে রাখা হয়।
এর আগে সফরের একমাত্র প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে বিসিবি একাদশকে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় অতিথিরা। প্রোটিয়া বধের মিশনে তাই বেশ সতর্ক টাইগাররা।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাশ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, সোহাগ গাজী, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মুস্তাফিজুর রহমান ও আরাফাত সানি।
দ.আফ্রিকার একাদশ: কুইন্টন ডি কক, রিলে রুশো, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি, ডেভিড উইসিস, ওয়েন পারনেল, কাইল অ্যাবট, কাগিসো রাবাদা ও অ্যারন ফাঙ্গিসো।