অবশেষে র‌্যাব পাচ্ছে সেই ৭০ মোটরসাইকেল

SHARE

motorcycleঅবশেষে ৭০ মোটরসাইকেলের সেই চালান র‌্যাবকে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সংস্থা হিসেবে র‌্যাব ওই মোটরসাইকেল ব্যবহার করবে। কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমদানি নিষিদ্ধ মোটরসাইকেলের চালানটি র‌্যাবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে চিঠি চালাচালিও শুরু হয়েছে। এর আগে মিথ্যা ঘোষণা ও ভুয়া কাগজ দাখিল করে আমদানি নিষিদ্ধ প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মোটরসাইকেল এনে তা খালাসের চেষ্টা করেছে বলাকা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পণ্য খালাসে তারা হাইকোর্টে রিট করে। আদালতের নির্দেশে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও বুয়েটের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের সিসি পরীক্ষা করানো হয়।

তদন্তে বেরিয়ে আসে_ জাপান থেকে আমদানি করা ৭০টি মোটরসাইকেলের মধ্যে ৫৪টি আমদানি নিষিদ্ধ, যেগুলো ২৫৫ সিসির ওপরে। গ্রাহক পর্যায়ে দেশে ১৫৫ সিসির ওপরের মোটরসাইকেল বিক্রি করা নিষিদ্ধ। ১৫৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল কেবল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন। অবৈধ চালান খালাস চেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে ৭০টি মোটরসাইকেলের ওই অবৈধ চালানটি কমলাপুর আইসিডিতে জব্দ রয়েছে। শুধু তাই নয়, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা কোনো ধরনের চিঠি ছাড়া বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে রহস্যজনকভাবে ছয়টি মোটরসাইকেল ফেলে যায়।

এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বলছে, আমদানি নিষিদ্ধ মোটরসাইকেলের এই চালানের মধ্যে অন্তত চারটি মোটরসাইকেল ৮০০ সিসির ওপর। অবৈধ চালানের ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের শক্ত অবস্থানে বিষয়টি টের পেয়ে ওই চারটি মোটরসাইকেল গায়েব করা হয়। পরে অবশ্য ৮০০ সিসির একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে আইসিডির মতো সুরক্ষিত জায়গা থেকে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য গায়েব হলো! এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান সমকালকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় আনা মোটরসাইকেলের চালানটি খালাস করতে তারা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আদালতের নির্দেশে তদন্ত কমিটি ও পরীক্ষার পর অনেক কিছু খোলাসা হয়। কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে আমদানি নিষিদ্ধ এ মোটরসাইকেল র‌্যাবকে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম আকন্দ সমকালকে বলেন, দু’দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে ২৫৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে। প্রথমে কাস্টমসের পক্ষ থেকে যে ছয়টি মোটরসাইকেলের নমুনা পাঠানো হয়, তা ছিল ১৫৫ সিসির নিচে। পরে কাস্টমসের গোয়েন্দাদের অনুরোধে স্পটে গিয়ে আমরা পরীক্ষা করি। ছয়টি মোটরসাইকেলের নমুনা পরীক্ষার কয়েক দিন পর কোনো চিঠি ছাড়াই রাতে ছয়টি মোটরসাইকেল কে বা কারা বুয়েটে ফেলে রেখে যায়। এখনও সে ছয়টি মোটরসাইকেল পড়ে আছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উম্মে নাহিদা আক্তার সমকালকে বলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আদালতে দুই দফা রিট করেছে। আদালতের নির্দেশে তদন্ত ও পরীক্ষার এক পর্যায়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মামলা না চালাতে আবেদন করে। তবে এই পর্যায়ে আদালত তাদের আবেদনে সাড়া দেননি। পুনরায় তদন্ত করে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীকেন্দ্রিক বলাকা এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি নিষিদ্ধ ৭০টি মোটরসাইকেল আমদানি করে। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে এই চালান কমলাপুর আইসিডি পোর্টে আসে। চলতি বছরের মার্চ থেকে তারা নানা কৌশলে মোটরসাইকেলের চালানটি খালাসের চেষ্টা-তদবির করতে থাকে। এরপর চালানটি জব্দ করলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আদালতে রিট করে। এ ছাড়া ৭০টি মোটরসাইকেলের ভেতরে যে ছয়টি ১৫৫ সিসির কম তার আলামত বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে চালানটি খালাসেরও চেষ্টা করা হয়। পরে বিষয়টি ধরা পড়লে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর অন্যান্য মোটরসাইকেলের সিসি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। আদালতের নির্দেশে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের উপস্থিতিতে পরীক্ষায় ওই চালানে ১৫৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। কমলাপুর আইসিডি পোর্ট থেকে আলামত কীভাবে গায়েব হলো, তা খুঁজে বের করবে এই কমিটি। বর্তমানে কমলাপুর আইসিডি পোর্টে সিলগালাকৃত মোটরসাইকেলের ওই কনটেইনারটি (টিসিএনইউ-৬০৯৪৮০৪ও৪০) বিশেষ নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।