সাকার মৃত্যুদণ্ড অতি প্রয়োজন: মাহবুবে আলম

SHARE

mahbub sakaমানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ন্যায় ও অতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বুধবার সাকা চৌধুরীর আপিল মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। আপিল শুনানির দশম দিনে দুই কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলো।

আগামী রোববার থেকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করবেন আসামিপক্ষ। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধের সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি বাহিনী ও নিজস্ব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন। একই দিনে চার স্থানে পর্যন্ত তাণ্ডব চালিয়েছেন তিনি।

মাহবুবে আলম বলেন, একাত্তরের এপ্রিল থেকে জুলাই পযন্ত তিনি এসব কাজ করেছেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর বেশি হামলা করেছেন। যেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। এসব অপরাধের চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে ৭টি অভিযোগে তিনি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু বাকি তিনটিতে তাকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ন্যায় এবং অতি প্রয়োজন বলে আদালতে আবেদন করেছি বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এর আগে আসামিপক্ষের শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের রায় উপস্থাপন করেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী এসএম শাহজাহান। গত ১৬ জুন শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনালের রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-জেরা এবং রায় সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) উপস্থাপন করেছেন তিনি।

পরে মঙ্গলবার (৩০ জুন) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের শেষ হওয়ায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন আসামিপক্ষ।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর আপিল বিভাগে আসা পঞ্চম এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।  একই বছরের ২৯ অক্টোবর খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের  মোট ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭টির পক্ষে সাক্ষী হাজির করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এগুলোর মধ্যে মোট ৯টি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ যে ছয়টি অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেনি সেগুলো থেকেও সাকা চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে চারটিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাকা চৌধুরীকে। তিনটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে ২০ বছর এবং আরো দু’টি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে। সব মিলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মোট ৭০ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন তিনি।

যে চারটি হত্যা-গণহত্যার দায়ে সাকাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো ৩ নম্বর (অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা), ৫ নম্বর (রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা), ৬ নম্বর (রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা) এবং ৮ নম্বর (চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যা) অভিযোগে।

অন্যদিকে ২ নম্বর (রাউজানের গহিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় গণহত্যা), ৪ নম্বর (জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যা) এবং ৭ নম্বর অভিযোগে (রাউজানের সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যা) আনা তিন হত্যা-গণহত্যায় সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

১৭ এবং ১৮ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে আরও পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যে দু’টি অভিযোগে যথাক্রমে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে নির্যাতন এবং চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।