কোকেন নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড়: তদন্তের উদ্যোগ জাতিসংঘের

SHARE

coken29চট্টগ্রামে তেলের সঙ্গে তরল কোকেনের চালান ধরা পড়ার আলোচিত ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এরই মধ্যে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে

আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) নড়েচড়ে বসেছে এবং তদন্তের উদ্যোগ নিচ্ছে

সরকারের তরফে জাতিসংঘকে এ ঘটনার তদন্তে সহযোগিতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সরকারের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসাইন আহম্মদ জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেয়া হবে। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে ঘটনাটি তদন্তের কথা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশজুড়ে তোলপাড় হওয়া এই ঘটনার পর গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এনবিআর। এরপর বিকেলে এক বৈঠকে চলতি সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যে চিঠিটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এমনিতে আকৃষ্ট হয়।

বিশেষ করে জাতিসংঘের। তারা স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে থাকে। সরকার চাইলে তারা তদন্তের সহযোগিতা করে।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজীবুর রহমান জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তারা সতর্ক ছিল বলে এত বড় চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

সরকার তার নিজস্ব ক্ষমতা দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রয়োজনে তদন্তে বৈদেশিক সহায়তা নেয়া হবে। তবে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আগে সিদ্ধান্ত হবে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি)’র সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন অপরাধের বিষয়ে খোঁজখবর রাখে।

সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করে থাকে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কোন যোগাযোগ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এনবিআরের কারও সঙ্গে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

এদিকে ধরা পড়া কোকেনের চালান বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য এসেছে এমনটি মনে করেন না মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে কোকেনের বাজার এখনও ততোটা সয়লাভ হয়নি। তারা মনে করেন এখানে রুট হিসেবে বাংলাদেশকে মাফিয়ারা ব্যবহার করতে পারে।

বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন তারা। পুরো বিষয়টি এনবিআর মনিটরিং করছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে তদন্ত করতে দুটি বিদেশী টিম চট্টগ্রাম বন্দরে আসার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত হয়েছে। দুই দলেই মোট ৫ সদস্য করে ১০ জন পৃথকভাবে বন্দর পরিদর্শন করবেন বলে ফোনে জানিয়েছেন তাদেরকে।

তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। বিদেশি কয়েকজন গোয়েন্দা সদস্য আসার কথা শুনেছি। তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। এদিকে এই ঘটনায় আমদানিকারক খান জাহান আলী লিমিটেডের বিরুদ্ধে গতকাল বিকালে বন্দর থানায় মামলা করেছে পুলিশ।

এতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যদিও তিনি এই ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।

ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সোহেল নামের তার প্রতিষ্ঠানের অপর এক কর্মকর্তা এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে জানান বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম।