বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য কোকেনের একটি চালান ধরা পড়ার পর গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের মধ্যবর্তী রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।
শুল্ক বিভাগের গোয়েন্দারা রোববার বলেন, তাদের ধারণা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অন্য কোনো দেশে মাদক চোরাচালানের জন্যে বাংলাদেশকে মধ্যবর্তী রুট হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শনিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা একটি একটি ড্রামে কোকেনের চালানটি পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে আনা একটি কন্টেইনারে ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামে তরল অবস্থায় কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন শুল্ক বিভাগের গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা বলছেন, ড্রামটিতে ১৮৫ কেজি তরল ছিল এবং তাতে এর এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৬০ কেজি কোকেন রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বিবিসিকে বলেন, তারা মনে করেন বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্যে কোকেনের চালানটি আনা হয়নি।
মইনুল খান বলছেন, কোকেনের চালানটি চট্টগ্রামে আসার পর ২৫ দিন সেটি বন্দরে পড়ে ছিল এবং যার নামে এসেছিল, তিনি এটি আমদানীর কথা অস্বীকার করেন। ফলে মি. খান মনে করছেন, এই চালানের পেছনে একটি আন্তর্জাতিক চক্র থাকতে পারে।
বাংলাদেশে হেরোইনসহ নানা ধরণের মাদক পাওয়া গেলেও কোকেনের প্রচলন কম বলেই ধারণা করা হয়। তবে বাংলাদেশে এর আগে ২০১৩ সালে পাউডার কোকেনের বড় একটি চালান উদ্ধার করা হয়েছিল।
কিন্তু দেশটির মধ্য দিয়ে মাদক চোরাচালানের ঝুঁকি আগে থেকেই রয়েছে, কারণ পৃথিবীর দুটি প্রধান মাদক উৎপাদনও চোরাচালানের কেন্দ্র গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের ঠিক মাঝখানে বাংলাদেশের অবস্থান।
কর্মকর্তারা বলছেন, মাদকের আসল গন্তব্য পশ্চিম ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকার কোন দেশ হলেও উৎস দেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়ার জন্যেই হয়তো ঐ চালানটি বাংলাদেশে আনা হয়েছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার বলছেন, কোকেনের চালান আটকের ঘটনার পর মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাদক চোরাচালানের মধ্যবর্তী রুট হলে তা বাংলাদেশের জন্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরী করতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশিদ মনে করেন, মাদক চোরাচালান এবং সংগঠিত অপরাধ, এমনকি জঙ্গী অর্থায়নের মধ্যে অনেকক্ষেত্রেই যোগসাজশ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে বাংলাদেশকে কোকেন চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হলে তা দেশটির জন্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরী করতে পারে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে খুব বেশী পণ্য আমদানি হয় না। এখন সূর্যমূখী তেলের চালানে কোকেন সনাক্ত হওয়ার পর আগামীতে ঐ মহাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নজরদারী করা হবে বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মইনুল খান। বিবিসি।