চট্টগ্রামে আসন পরির্বতনসহ দলীয় প্রার্থীও বদল করেছে বিএনপি

SHARE

একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে চট্টগ্রামে আসন পরির্বতনসহ দলীয় প্রার্থীও বদল করেছে বিএনপি। পুরোনো আসনে (চট্টগ্রাম-১১) আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের আসনে (চট্টগ্রাম-১০) ছেলে সাঈদ আল নোমান নির্বাচন করছেন। একই সঙ্গে সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম-৪) ও রাউজানে (চট্টগ্রাম-৬) আসনে দলীয় প্রার্থী বদল হয়েছে। এ দুটি আসনে নতুন করে প্রার্থী করা হয়েছে আসলাম চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে। সব মিলিয়ে এই চার আসনে বিএনপির দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়নে পুরোনো ও নতুন নেতৃত্বে তৃণমূলে ভিন্ন আমেজ তৈরি হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে তার পুরোনো আসনে (চট্টগ্রাম-১১) চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এই সংসদীয় এলাকা থেকে ছয়টি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চারবার বিজয়ী হয়েছেন তিনি। এর আগে তাকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এখন আসনটিতে নির্বাচন করবেন প্রয়াত বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি সাঈদ আল নোমান। তার বাবা বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান দুটি সংসদ নির্বাচনে (নবম ও একাদশ) অংশ নেন এই আসন থেকে।

চট্টগ্রাম-৪ আসনেও (সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড) প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। আসনটিতে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী। এর আগে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয় এ আসনে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিলেও শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকারকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছেন।

চট্টগ্রামের একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, পুরোনো আর নতুন নেতৃত্বে এবার এই চারটি আসনে দলের ভেদাভেদ ভুলে কাজ করলে দল শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীও জয়ী হবে বলে বিশ্বাস। তাছাড়া নতুন প্রার্থীর কারণে ভিন্ন মেরূকরণে নেতাকর্মীরা ভিন্ন আমেজে মাঠে কাজ করবেন।

চট্টগ্রাম-৪ আসনের প্রার্থী আসলাম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনন্য রাজনৈতিক দর্শন বহুদলীয় গণতন্ত্র ও উন্নয়ন সমৃদ্ধির রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি উন্নয়ন অগ্রযাত্রার যে রাজনীতি, তা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে অনন্য অবস্থান তৈরি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়া পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গতিশীল ও আধুনিক নেতৃত্বে বিএনপি এখন দেশের আশা-ভরসা ও আস্থার স্বীকৃত ঠিকানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সামনের দিনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

নিজ সংসদীয় আসনের ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দল আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে, তা আপনাদের ত্যাগের ফসল। আপনারা চেয়েছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তন করে আমাকে চূড়ান্ত করেছে। আপনাদের এই আস্থা বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। সেইসঙ্গে আপনাদেরও সব মতপার্থক্য ভুলে একযোগে কাজ করতে হবে।’

চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাঈদ আল নোমান কালবেলাকে বলেন, ‘দল আমার প্রতি আস্থা রাখায় সর্বপ্রথম মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের নেতা তারেক রহমানের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা ও অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল নোমান, যিনি আজ বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। দল আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, তা আমার জন্য এক অনন্য সম্মান এবং একই সঙ্গে দায়িত্ব। ইনশাআল্লাহ, সেই আস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের আপামর জনতা, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ১০ আসনের প্রতিটি মানুষ সুখ-দুঃখে পাশে থেকে, তাদের ন্যায্য অধিকার ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি অবিচলভাবে কাজ করে যাব। ইনশাআল্লাহ, ধানের শীষের বিজয়ের মাধ্যমে এ আসনে গণমানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।’

চট্টগ্রাম-৬ আসনের দলের মনোনীত প্রার্থী গোলাম আকবর খোন্দকার কালবেলাকে বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে দল আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছে, এ জন্য আমি দলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাকে মনোনয়ন দিয়ে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমি খুবই আনন্দিত।’

তিনি বলেন, ‘ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনতে সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করব। রাউজানকে ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় জনপদ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য। সেইসঙ্গে রাউজানকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। জনগণ যদি আমার ওপর তাদের আস্থা রাখে আমি অবশ্যই উন্নয়নের মাধ্যমে এর প্রতিদান দেব ইনশাল্লাহ।’

রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গোলাম আকবর খোন্দকার দলের দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সেই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ জন্য আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই, সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য ‘একই কথা বললেন রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনও। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে একটি আদর্শ ও সন্ত্রাসমুক্ত রাউজান গড়তে ধানের শীষের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’