মার্কিন অবরোধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস ভেনেজুয়েলায়

SHARE

মার্কিন অবরোধ সমর্থনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির আইন পাস করেছে ভেনেজুয়েলা। দেশটির জাতীয় পরিষদে এই আইন পাস করা হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ সমর্থন বা অর্থায়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।

মঙ্গলবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আইনটি পাস হয়। এর ঠিক আগেই যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার এসব পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি ‘সমুদ্রদস্যুতা’ বলে অভিহিত করেছে।

আইনটি জাতীয় পরিষদে উপস্থাপন করার সময় আইনপ্রণেতা জিউসেপ্পে আলেসান্দ্রেল্লো বলেন, ‘এই আইন জাতীয় অর্থনীতি রক্ষা এবং জনগণের জীবনমানের অবনতি ঠেকানোর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় পরিষদ বর্তমানে মাদুরোর শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

ভেনেজুয়েলা অভিযোগ করেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে আগ্রাসী নীতি আরও জোরদার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে লাতিন আমেরিকায় বড় আকারের সামরিক উপস্থিতি, তেলবাহী জাহাজ জব্দ, মাদক পাচারের অভিযোগে নৌকায় হামলা এবং ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালানোর হুমকি। এসব কর্মকাণ্ডের বৈধতা আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত বলে উল্লেখ করেছে কারাকাস।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত সামুয়েল মোনকাদা বলেন, ‘আমরা এমন এক শক্তির মুখোমুখি, যারা আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করছে এবং ভেনেজুয়েলাবাসীকে দেশ ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে চাইছে। হুমকি ভেনেজুয়েলা নয়, হুমকি হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার।’

চীন ও রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি ‘ছক’ তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে অন্য লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি কলম্বিয়াসহ কয়েকটি দেশ ভেনেজুয়েলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা ও উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে আর্জেন্টিনা, পানামা ও চিলির মতো ডানপন্থি সরকারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে একমত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশেষ অভিযান পরিচালনার বিমান ও সেনা পরিবহনকারী উড়োজাহাজ মোতায়েন করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, দক্ষিণ আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের এটি সবচেয়ে বড় নৌবহর।

মাদুরো সরকারের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার সরকার উৎখাত করে দেশটির বিশাল তেলসম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, তেল বিক্রি মাদুরোর সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক ভরসা, এবং তিনি মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ পুনরায় তুলে ধরেন।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলা সরকার অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে পরিস্থিতি আরও কঠোর হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দল দাবি করছে, নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে তারাই বিজয়ী হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাদুরোর জয় খুব কম দেশই স্বীকৃতি দিয়েছে।

সূত্র: আল-জারিরা