খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত, চিকিৎসকদের স্বস্তি

SHARE

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বয়স প্রায় আশি বছর। দ্রুত সেরে না ওঠার পেছনে বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। এ ছাড়া এই বয়সে নানা রোগে আক্রান্ত তিনি।
কারাগারে যাওয়ার পর থেকে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাননি। খালেদা জিয়ার নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে না—এটিই চিকিৎসকদের কাছে স্বস্তির বিষয়।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মেডিক্যাল বোর্ড।

গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যের উন্নতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণটা অনেক বড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বয়সে সব চিকিৎসা একসঙ্গে করতে গেলেও উচ্চঝুঁকি থেকে যায়।

ওই চিকিৎসক বলেন, ইতিবাচক বিষয় হলো, খালেদা জিয়ার নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে না।
উন্নত চিকিৎসায় তাঁকে শিগগিরই দেশের বাইরে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই মেডিক্যাল বোর্ডের। এভারকেয়ার হাসপাতালে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিদেশের হাসপাতালে চাইলে তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না এবং চাইলেই যথাসময়ে পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় না। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর দেশে ‘খালেদা জিয়া’ একজনই।
এটাই যথেষ্ট। দেশের শীর্ষ বিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ডে যুক্ত আছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল। তাদের সমন্বয়ে বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারকি করছে।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন তাঁর পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে শাশুড়ির শয্যাপাশে কাটান। বাসায় থাকার সময়ও টেলিফোনে শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসার বিষয়গুলোর তিনিই সমন্বয় করেন।

এদিকে কাতারের আমিরের সৌজন্যে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে বলে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ড পরামর্শ দিলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চলে আসবে। আর যখনই বিএনপি চাইবে তখন কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবে।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে এসএসএফ।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের ১২ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তদারক করছিল। এরপর চীন ও যুক্তরাজ্য থেকে একাধিক মেডিক্যাল টিম এই বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক শেষে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। তবে শুক্রবার শারীরিক পরিস্থিতি দীর্ঘ যাত্রার উপযুক্ত না থাকায় আর বিদেশে নেওয়া হয়নি। এখন আপাতত দেশেই সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা।