আসিফের মন্তব্যের নিন্দা বাফুফের, ব্যাখ্যা চেয়ে বিসিবিতে চিঠি

SHARE

টেস্ট ক্রিকেটের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকার এক পাঁচতারকা হোটেলে দুই দিনব্যাপী ক্রিকেট কনফারেন্সের আয়োজন করেছে বিসিবি। দেশের ৬৪ জেলার সঙ্গে ৮ বিভাগের কোচ, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল শুরু হয়েছে ২৫ বছর পূর্তির আয়োজন। সেই আয়োজনেই ফুটবল নিয়ে আপত্তিকর ও বিরূপ মন্তব্য করেন আসিফ আকবর।

জেলা স্টেডিয়ামগুলোতে ফুটবলের জন্য ক্রিকেট খেলা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আসিফ।
বিসিবি পরিচালকের এমন মন্তব্যর পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে। তার এমন মন্তব্য আপত্তিকর সম্বোধন করে নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আসিফের মন্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে আজ বিসিবিতে এক চিঠি পাঠিয়েছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

বিসিবিতে পাঠানো তাবিথ আউয়াল স্বাক্ষরিত বাফুফের চিঠিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো—

‘আপনার মতো অভিজ্ঞ ও মর্যাদাপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, যা আমাদের জন্য এক গর্বের বিষয়।
আমি গত ৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্সে প্রদত্ত বক্তব্য সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্সে ফুটবল খেলাকে নিয়ে অত্যন্ত অবমাননাকর, অপমানজনক ও উদ্বেগজনক মন্তব্য করা হয়, যা শুধু ফুটবল নয়, পুরো ক্রীড়া সমাজের জন্যই হতাশাজনক। আমরা এই মন্তব্যের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই পত্রকে আমাদের আনুষ্ঠানিক আপত্তি হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ক্রিকেট কনফারেন্স থেকে এমন মনোভাব প্রকাশ পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক।
আমরা সবাই খেলাধুলাকে একটি ঐক্যের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা আমাদের জাতিকে একত্রিত করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে গর্ব ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। আমরা উভয়েই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে দেশের সব ক্রীড়া ফেডারেশন একসঙ্গে কাজ করবে একটি সুস্থ, দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

কিন্তু যখন ক্রিকেট বোর্ডের কনফারেন্সে ‘অভিজাত’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, আমরা কি সত্যিই জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা বিপ্লবে ঘোষিত বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশের আদর্শে অটল আছি? আর যখন ‘মারামারি’ শব্দটি উচ্চারিত হয়, তখন আরো গুরুতর প্রশ্ন জাগে, এটি কি কোনো ধরনের হুমকি?

এমন দৃষ্টিকটু ও অশোভন বক্তব্য ফুটবল ও ফুটবল খেলোয়াড়দের প্রতি চরম অসম্মানজনক, যা ক্রীড়ার মৌলিক মূল্যবোধ ও চেতনার পরিপন্থী। গণমানুষের প্রাণের খেলা ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, কোটি মানুষের আবেগ, ঐক্য ও গৌরবের প্রতীক।
এই ফুটবল ও ফুটবল খেলোয়াড়রাই মুক্তিযুদ্ধ, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ মোকাবেলাসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

আপনি নিশ্চয়ই অবগত যে বাংলাদেশে ফুটবলের অভিভাবক হিসেবে আমি ও আমার নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি, হাজার হাজার খেলোয়াড় এবং কোটি কোটি ভক্তের প্রতিনিধিত্ব করি। তাই এই ঘটনায় আমি আপনার কাছে একটি আনুষ্ঠানিক ও জনসম্মুখে ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছি।

আপনার প্রতি আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও সম্মান অটুট। আমি বিশ্বাস করি, আপনি একজন জাতীয় ক্রীড়াবিদ ও সম্মানিত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে আপনার প্ল্যাটফর্মকে কোনো ভুল উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে দেবেন না; বরং আপনি এখনই এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেশের কোটি ক্রীড়ামোদি মনে সৃষ্ট আঘাত ও বিভ্রান্তি দূর করবেন।

বাংলাদেশে ক্রিকেটসহ সব খেলাধুলার সফল যাত্রা কামনা করছি।’

এর আগে গতকাল ক্রিকেট কনফারেন্সে আসিফ বলেছেন, ‘ফুটবলারদের জন্য (ক্রিকেট) খেলা যাচ্ছে না, সারা দেশে। এরা উইকেট ভেঙে ফেলে, উইকেট নষ্ট করে ফেলে। আগামী ২৪ তারিখ আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল খেলা আছে, কুমিল্লা স্টেডিয়ামে। এই সমস্যা শুধু কুমিল্লার নয়, প্রতিটি জেলার স্টেডিয়াম অকুপাই করে রেখেছে ফুটবল। যেখানে ফুটবলের কাজ নেই, সেখানেও স্টেডিয়াম অকুপাই করে রেখেছে। ফুটবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ, এটা আমি সরাসরি বলতে চাই। কারণ, ক্রিকেট একটা ডিসিপ্লিনড খেলা, আভিজাত্যের খেলা এটি, এখানে অনেক নিয়মকানুন আছে, রেকর্ডের খেলা।’

‘ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষজন একটু ভদ্র স্বাভাবিকভাবেই, আভিজাত্যের ইস্যু আছে এখানে। আমার আবার একটু সমস্যা আছে। আমি আবার অত ভদ্র না। যেহেতু আমি অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার, অনেক আগের.. সুযোগ পাইনি নিজেকে ফোকাস করার… যদি ফুটবল মারপিট করে, আমিও মারপিট করব, নো প্রবলেম…যে যেমন, তার সঙ্গে তেমন করতে হবে। আমরা তো চাঁদা চাচ্ছি না, কিডনি চাচ্ছি না, হার্ট-চোখ চাচ্ছি না, আমরা চাচ্ছি খেলার অধিকার’— যোগ করেন আসিফ।