বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার মধ্যেই ভারত সফরের ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প

SHARE

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা ‘ভালোই চলছে’ এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন আগামী বছর তিনি দেশটিতে সফরে যেতে পারেন।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘একজন বন্ধু’ ও ‘একজন মহান মানুষ’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং দাবি করেন, ভারত ‘মূলত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেছে’ — এমন বক্তব্য তিনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পুনরাবৃত্তি করছেন।

গত আগস্টে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে। ট্রাম্প দাবি করেন, এর মাধ্যমে মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থায়ন করা হচ্ছে — যদিও দিল্লি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন দিল্লি ও ওয়াশিংটন এ বছরের শেষের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে।

ভারত সফরের সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সেটা ঠিক করব, আমি যাব… প্রধানমন্ত্রী মোদি একজন মহান মানুষ এবং আমি সেখানে যাব।’

তিনি আরো বলেন, সফরটি কবে হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে তা আগামী বছর হতে পারে।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন তিনি এ বছর ভারতের আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য কোয়াড সম্মেলনে যোগ দেবেন কি না এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে গঠিত কোয়াড ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে। এ বছরের নভেম্বর মাসে ভারতের আয়োজনে কোয়াডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, ২০২৫ সালের সম্মেলনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুরু হয়েছে, মূলত দিল্লির রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে কেন্দ্র করে। তবে আমদানি কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের দাবি ভারত সরাসরি নিশ্চিত করেনি।

রয়টার্সের জাহাজের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি আগের মাসের তুলনায় সামান্য বেড়েছিল। তবে একই সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ভারতীয় ও চীনা শোধনাগারগুলো রাশিয়ান তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে রাশিয়ান তেল ব্রেন্ট ক্রুডের তুলনায় বড় ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে।

চীনের পর ভারত রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। ২০২৪ সালে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ এসেছিল রাশিয়া থেকে — যা ২০২১ সালে ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।

দিল্লি তার রুশ তেল কেনাকে সমর্থন করে বলেছে, একটি বড় জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে তাদের সবচেয়ে সস্তা উৎস থেকে তেল কিনতে হবে, যাতে কোটি কোটি দরিদ্র ভারতীয়কে বাড়তি খরচের চাপ থেকে বাঁচানো যায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার আরো উল্লেখ করেছে, ইউরোপ এখনো রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ শুধু ভারতকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে — যা তারা ‘নির্বাচনমূলক’ আচরণ বলে আখ্যা দিয়েছে।

রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো তেল ও গ্যাস কিনতে দিল্লির ওপর চাপ দিচ্ছে ।

একজন ভারতীয় সরকারি মুখপাত্র আগেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ‘চলমান’ এবং তারা ‘ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।’

যদিও রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে টানাপোড়েনে ফেলেছিল, এখন সম্পর্ক কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ট্রাম্প এর আগে জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিতভাবে ফোনে তার ভারতীয় সমকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

দুই নেতা প্রকাশ্যে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ট্রাম্প ও মোদি এই অঙ্কটিকে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।