ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতারও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের ‘সব শর্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া’ নিয়ে সমঝোতা হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েল গাজার হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন এলাকা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।
৯০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করলেও গাজা উপত্যকা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। গাজার ফিলিস্তিনিরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আশায় রয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও তারা নিজেদের শহর, গ্রাম পুনর্গঠনের দীর্ঘ ও জটিল পথেই থাকবেন।
আর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাও হবে কষ্টকর।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হবে। আর পুরো উপত্যকাকে পুনরায় বাসযোগ্য করতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে। যদি ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ বড় সমস্যা না করে, তাহলেই গাজা পুনর্গঠন সম্ভব।
অবশ্য ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন বলছে, এর আগে ছোট ছোট যুদ্ধের পরও ইসরায়েলি অবরোধ গাজা পুনর্গঠনকে অনেক কঠিন করেছে।
দোহায় অবস্থানরত গাজা বিশেষজ্ঞ আজমি কেশাউই আলজাজিরাকে বলেছেন, যুদ্ধোত্তর যেকোনো পরিকল্পনায় ইসরায়েলের ওপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ থাকা আবশ্যক, যাতে নির্মাণসামগ্রী প্রবেশ করতে পারে।
ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তবে এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘কেবল তাদের ইচ্ছা থাকাটাই যথেষ্ট নয়, এটি কেবল তাদের ওপরই নির্ভর করে না।’
এ ছাড়া ট্রাম্পের পরিকল্পনার একটি শর্ত হলো হামাসকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।
তবে গাজার ভবিষ্যতের জন্য পুনর্গঠন গুরুত্বপূর্ণ হলেও ভয় রয়েছে যে, হামাস ক্ষমতা ছাড়লে উপত্যকাটি অরাজকতা ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। গাজাভিত্তিক সাংবাদিক ইয়াসের আল-বানা বলছিলেন, ‘গাজায় হামাস সরকারের একটি সুবিধা হলো তারা নিরাপত্তা বজায় রাখে।’
গাজায় গণহত্যা চালানোর সময় ইসরায়েল স্বেচ্ছায় গাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কুখ্যাত গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছে। এসব গোষ্ঠী ত্রাণ চুরি করে নিয়ে বিক্রির মাধ্যমে সর্বোচ্চ লাভ তুলে নিয়েছে।
যদিও গোষ্ঠীগুলো এখন সমস্যা তৈরি করছে, তবে কেশাওয়ি মনে করেন, ইসরায়েল গাজা ছাড়লে তারা টিকে থাকবে না। কারণ ফিলিস্তিনি সমাজ এমন লোকেদের উপেক্ষা করবে, যারা বেশির ভাগ সাধারণের চোখে বিশ্বাসঘাতক।
তবে দলীয় সংঘাত, বিশেষ করে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে সংঘাত সমস্যার কারণ হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ফাতাহর হাতে। আর গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে গোষ্ঠীটি অনেকাংশেই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
২০০৬ সালে হামাস নির্বাচনে জিতে গেলে ফাতাহর সঙ্গে বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয়। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূচনা ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির সময় থেকে।
হামাস তাদের প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ইসরায়েলকে স্বীকার করেনি এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ ত্যাগ করেনি। ফলে গোষ্ঠীটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর চোখে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
হামাসকে নির্মূল করতে যুক্তরাষ্ট্র ফাতাহকে সমর্থন দেয়, যা পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। ২০০৭ সালের জুনে হামাস ফাতাহকে উৎখাত করে। এতে ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন স্থায়ী হয়ে যায়। কেশাওয়ির মতে, আঞ্চলিক দেশগুলো ও সম্ভবত ইসরায়েলের সমর্থনে নির্বাসিত ফাতাহ নেতাদের কেউ কেউ ফিরে এলে তাঁরা হামাস ও তাঁদের মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারেন। সূত্র : আলজাজিরা