বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দর-কষাকষির মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, সীমিতসংখ্যক রপ্তানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশের দর-কষাকষির ক্ষমতাকে দুর্বল করে তুলছে। তাই কার্যকরভাবে আলোচনার দক্ষতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ‘বিল্ডিং ন্যাশনাল ক্যাপাবিলিটিস ইন ট্রেড নেগোসিয়েশনস : রিফ্লেকশনস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যচুক্তিতে দর-কষাকষির সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আজকের দ্রুত বিকশিত বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে। সে ক্ষেত্রে অনুকূল বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করার জন্য দক্ষ আলোচনার সক্ষমতা অপরিহার্য হয়ে উঠবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অল্প কিছু পণ্যের ওপর নির্ভর করে বৈশ্বিক দর-কষাকষি করা অত্যন্ত কঠিন।
আমাদের দরকার রপ্তানি বাজারে বহুমুখিতা এবং শক্তিশালী টিম, যারা আন্তর্জাতিক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ এখনো বৈশ্বিক বাণিজ্যে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে নেই। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে অনেক বেশি দাবি করার অবস্থায় নেই। সমঝোতার পথেই এগিয়ে যাওয়া উচিত।
’
লুেফ সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘বাণিজ্যবিষয়ক দর-কষাকষিতে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় ঘাটতি নেই; বরং নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ঘাটতি আছে। তাই অনেক বিষয়ে আমাদের আলোচনা শুরু হলেও শেষ হয়নি। সরকারের বেশির ভাগ কর্মকর্তার মধ্যে এখনো তথ্যভিত্তিক আলোচনার সংস্কৃতি নেই।’
শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কোনো বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠালে উত্তর আসতে মাসের পর মাস সময় লাগে। এরপর ছয় মাস পর যখন উত্তর পাঠায়, তখন দেখা যায়, অন্য পক্ষ সব ভুলে গেছে।
একবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে দেওয়া এক চিঠির উত্তর আসার অপেক্ষায় তাঁরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু ও শেষ করে ফেলেছেন।’
লুেফ সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকারে যোগ দেওয়ার পর আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সে সময় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি উঠে আসে। তখন আমাদের কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিছু আলোচনায় বেশ অগ্রগতিও হয়েছিল। কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। একদিন হঠাৎ ফোন পেলাম, একজনকে বদলি করে মৎস্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এক সপ্তাহ পর আরেকজনকে বদলি করা হয়। ফলে বাণিজ্যবিষয়ক নানা আলোচনায় আমাদের সামষ্টিক সক্ষমতা কমে যায়।’
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘বাণিজ্যচুক্তি বা আলোচনায় যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের সঠিক জায়গায় নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’