ইউক্রেন যদি শান্তিচুক্তিতে রাজি না হয়, তবে সামরিকভাবেই রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জন করবে। এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিনি আলোচনার সম্ভাবনা পুরোপুরি বাতিল করেননি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যদি কোনো চুক্তিতে রাজি না হয়, তবে রাশিয়া সামরিকভাবেই নিজেদের সব লক্ষ্য অর্জন করবে। চীনে এক সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়ার পর দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানটিকে অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বিশ্বব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। অবশ্য ট্রাম্প বারবার পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। তবে পুতিন তার “আন্তরিক প্রচেষ্টা”র প্রশংসা করলেও এখনো তা মানেননি।
অন্যদিকে ইউক্রেন সফরে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প অন্তত পুতিনকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন। প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যসহ মিত্ররা রাশিয়ার ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ দেবে এবং ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেবে।
এর আগে গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে তাকে টেনে বের করেন ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতেরও চেষ্টা করেছিলেন।
পুতিন এ বিষয়ে বলেন, “আমি কখনোই এমন বৈঠকের সম্ভাবনা বাতিল করিনি। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এর কোনো লাভ হবে কি না। দেখা যাক।”
তিনি আরও বলেন, যেকোনো বৈঠকের আগে যথাযথ প্রস্তুতি প্রয়োজন। এমনকি জেলেনস্কি চাইলে মস্কোতেও আসতে পারেন। তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে এটিকে “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
জেলেনস্কি পুতিনের এ অনীহাকেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারের যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে।
বুধবার ট্রাম্প বলেন, পুতিন ভালোভাবেই জানেন তিনি কোথায় অবস্থান করছেন। তার কাছে আমার আলাদা কোনো বার্তা নেই। তিনি জানেন আমি কোথায় আছি, সিদ্ধান্ত নেবেন একদিকে বা অন্যদিকে।
হোয়াইট হাউসে পোল্যান্ডের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরোকিকে স্বাগত জানানোর সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতকে লক্ষ্য করে নেওয়া দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞাই প্রমাণ করে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। আপনি এটাকে কোনো পদক্ষেপ মনে করেন না? এখনো দ্বিতীয় ধাপ আর তৃতীয় ধাপে যাইনি।
বেইজিংয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাংবাদিক যখন যুদ্ধ শিগগির শেষ হতে পারে কি না জানতে চাইলে পুতিন বলেন, “টানেলের শেষে সামান্য আলো দেখা যাচ্ছে। সাধারণ জ্ঞান কাজ করলে গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া সম্ভব। না হলে সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, দনবাস অঞ্চল রাশিয়া ছাড়বে না। আবারও তিনি দাবি করেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না এবং রুশভাষীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বন্ধ করবে।
তিনি ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে শান্তিচুক্তি হলেও পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দনবাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, কারণ ওই এলাকার জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে— যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত।
বেইজিংয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের পর কিম বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেওয়া তাদের “ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দায়িত্ব”। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, পুতিন কিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ককে “বিশেষ আস্থা, বন্ধুত্ব ও জোটের সম্পর্ক” বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের মিত্রদের নিয়ে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর বৈঠক আয়োজন করছেন। এলিসি প্রাসাদের একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রেখে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি আদায়ের চেষ্টা হবে।