অ্যাপে আইসিই এজেন্টদের গতিবিধি জেনে সতর্ক হচ্ছে অভিবাসীরা

SHARE

লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্প্রতি এক গ্রীষ্মে ভোর হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়েন ফ্রান্সিসকো ‘চাভো’ রোমেরো এবং আরো এক ডজন অভিবাসন অধিকারকর্মী। তারা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের গাড়ি অনুসরণের জন্য তাদের আটককেন্দ্র এলাকায় জড়ো হন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অবস্থান সম্পর্কে সতর্কবার্তা পাঠান।

অন্যদিকে অস্টিনে এক প্রযুক্তি কর্মী এজেন্টদের দেখা মিললে সতর্ক করার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন, যার ব্যবহারকারী এখন ১০ লাখের বেশি। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে আরেকজন অধিকারকর্মী স্থানীয় এলাকায় অভিবাসন আইন প্রয়োগকারীদের অভিযানের বিষয়ে সতর্ক করার জন্য একই ধরনের একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইসিইর জন্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত ৭৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যাপক বিতারণ কার্যক্রম জোরদার করছেন। এ ছাড়া আইনজীবী, ইতিহাসবিদ ও এক ডজন অধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, ফেডারেল অভিবাসন এজেন্টদের বেসামরিক নজরদারিও আরো দৃঢ় হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের অভিবাসী অধিকার সংগঠন ইউনিয়ন দেল বারিওর সঙ্গে যুক্ত ৫০ বছর বয়সী রোমেরো বলেন, ‘অল্প কিছু সম্পদ দিয়েই আমরা এমন এক বিলিয়ন ডলারের দমনমূলক রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের মুখোমুখি হতে, চ্যালেঞ্জ করতে ও উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি, যারা আমাদের মানুষকে আক্রমণ ও অপহরণ করছে।’

রোমেরো জানান, তিনি ও অন্য অধিকারকর্মীরা প্রায় প্রতিদিন সকালে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ মাইল দক্ষিণে টার্মিনাল আইল্যান্ডের কাছে আইসিইর আটককেন্দ্র এলাকায় জড়ো হন।
তারা চিহ্নিত বা অচিহ্নিত গাড়িতে এজেন্টদের অভিযান চালাতে বের হতে দেখলে কয়েক গাড়ির দূরত্ব বজায় রেখে তাদের অনুসরণ করেন এবং জনসাধারণকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে সতর্ক করেন।

রোমেরোর দাবি, তিনি লাতিনো সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিচ্ছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, তিনি ও যারা আইসিই এজেন্টদের নজরদারি করছেন এবং মানুষের কাছে তাদের কাজের ব্যাপারে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, তারা অপরাধীদের সহায়তা করছেন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেল জ্যাকসন বলেন, ‘ফেডারেল আইন প্রয়োগে বাধা দেওয়া অপরাধ, যেমন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের আক্রমণ করা বা অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের লুকিয়ে রাখা।
অ্যাপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে অপরাধ করলে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।’

ছয়জন আইনি বিশেষজ্ঞ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যতক্ষণ না অধিকারকর্মীরা আইসিইর কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, ততক্ষণ তাদের নজরদারি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অধীনে অনেকাংশে সুরক্ষিত। আদালত দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, জনসমক্ষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা বৈধ।

ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনে কাজ করেন সিভিল লিবার্টিজ টিমের আইনজীবী সোফিয়া কোপ। তিনি বলেন, ‘যদি অধিকারকর্মীরা আইসিইর কাজ রেকর্ড করে এবং মানুষকে তাদের অবস্থান জানায় এ উদ্দেশ্যে যে মানুষ যেন আইসিই এড়াতে পারে বা শারীরিকভাবে আইসিইর কাজে বাধা দিতে পারে, তখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
যদি এমন কোনো মামলা আদালতে যায়, তবে আদালত হয়তো প্রাসঙ্গিক তথ্যগত পার্থক্য হিসেবে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।’

রক্ষণশীল চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আইনি বিশেষজ্ঞ হ্যান্স ফন স্পাকভস্কিও একমত হয়েছেন, কেবল আইসিই এজেন্টদের নজরদারির কারণে অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা চালানো ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কঠিন হবে। কিন্তু তিনি একটি ছোট সুযোগ দেখছেন বলেও জানান।

হ্যান্স বলেন, আদালত যেমন ট্রাফিক সতর্কীকরণ অ্যাপগুলো বৈধ ঘোষণা করেছে, যেগুলো চালকদের সামনে পুলিশ আছে বলে সতর্ক করে দেয় এবং আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করে। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দিতে পারে, আইসিই ট্র্যাকিং অ্যাপগুলো মানুষকে আইন ভাঙতে উৎসাহিত করছে। এটা এমন একটি পার্থক্য, যা বিচারক বিবেচনা করতে পারেন, যদি বিচার বিভাগ এ রকম কোনো অ্যাপ নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করে।

‘সতর্ক হও’
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জুলাই মাসে বলেছিলেন, টেক্সাসভিত্তিক আইসিইব্লক নামের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইসিই-ট্র্যাকিং অ্যাপের নির্মাতা জশুয়া অ্যারনকে ‘সতর্ক’ থাকতে হবে এবং তিনি ‘সংবিধান দিয়ে সুরক্ষিত নন’।

এ ছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, অ্যারন ও অন্যান্য অ্যাপ নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি বিচার বিভাগের সঙ্গে কাজ করছেন। রয়টার্সকে পাঠানো এক ই-মেইলে তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি আমাদের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে বাধাগ্রস্ত করেন বা আক্রমণ করেন, আমরা আপনাকে খুঁজে বের করব এবং আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করব।’

অন্যদিকে সরকার তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না বা তিনি কোনো অভিযোগ বা মামলার সম্মুখীন হয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যারন শুধু বলেন, ‘না।’

এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘এই প্রশাসন সাধারণত ক্যামেরার সামনে অনেক গরম বাতাস ছাড়ে, কিন্তু পরে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কারণ তারা জানে তাদের পক্ষে আইনি ভিত্তি নেই। মানুষ তাদের নিজ চোখে যা দেখতে পাচ্ছে, তা সীমিত করা যায় না।’

তবে অ্যারনের পরিবার রেহাই পায়নি। তার স্ত্রী ক্যারোলিন ফেইনস্টাইন সম্প্রতি বিচার বিভাগের ইউএস ট্রাস্টি প্রগ্রামে ফরেনসিক অডিটর হিসেবে এক দশকের চাকরি হারান। লিখিত বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ফেইনস্টাইন বরখাস্ত হয়েছেন, কারণ তিনি আইসিইব্লকের আইপির মালিক কম্পানিতে অংশীদার ছিলেন।

মরোক্কান অভিবাসী মা ও পুয়ের্তো রিকান বাবার সন্তান আহমাদ পেরেজ (২৩) জানুয়ারি মাসে লং আইল্যান্ডের দুটি কাউন্টিকে কেন্দ্র করে আইসিই ট্র্যাকিং অ্যাপ তৈরি করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসলিপ ফরওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। অ্যাপটির ব্যবহারকারী ৮০ হাজার। পেরেজ ও তার স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা অ্যাপে পাওয়া বেনামি আইসিইসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করেন, তারপর নোটিফিকেশন পাঠান। স্বেচ্ছাসেবকরা রাস্তায় গিয়ে যাচাই করেন, অথবা নিকটবর্তী পুলিশ বিভাগে যোগাযোগ করেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় কোনো স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে আইসিই এজেন্ট ভেবে ভুল করা হয়নি।

পেরেজ বলেন, ‘আমরা সবাই চাই, অপরাধীরা রাস্তায় না থাকুক। আমরা সবাই চাই গ্যাং সদস্যরা আমাদের কমিউনিটি থেকে দূরে থাকুক। কিন্তু এখন যা দেখছি তা হলো নিরপরাধ পরিবার, নিরপরাধ শিশু, যাদের কোনো অপরাধ রেকর্ড নেই, এমনকি কখনো কখনো মার্কিন নাগরিকদেরও আটক করা হচ্ছে…এবং দেশ থেকে এত দ্রুত বিতাড়িত করা হচ্ছে যেন এটা ফেডেক্স প্যাকেজ।’