বর্জ্য রিসাইকেল ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হ্যারি কেইন, ব্র্যান্ড পার্টনারশিপে ক্রীড়াবিদদের নতুন ধারা

SHARE

অক্টোবরের এক রাত। চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে হারের পর পরই বায়ার্ন মিউনিখ দলের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল একটি নৈশভোজ। জায়গাটা ছিলো ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ‘দ্য বেলফ্রি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’। ঠিক সেখানেই ঘটলো এক দৃশ্য, যা পরে হয়ে উঠল একটি স্টার্টআপ ব্র্যান্ডের জন্য গর্বের বিষয়।

টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা থমাস মুলার হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘হ্যারি, এখানে একজন রেফলো পরে আছে!’ ব্র্যান্ডটির কথা তিনি বারবার শুনেছেন হ্যারি কেইনের মুখে—গলফ খেলার সময়, অনুশীলনের ফাঁকে, ডাইনিং টেবিলে।

তবে কেইন হেসে জানালেন, ‘ওই লোকটা আসলে রেফলো-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ররি ম্যাকফ্যাডেন!’ মুলারের চেহারা বলেই দিচ্ছিল, তিনি বুঝতেই পারেননি যে এই তরুণ ব্র্যান্ডের পেছনে এত বড় মস্তিষ্ক কাজ করছে।

রেফলো মূলত এক নতুন ধরণের স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড, যারা প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করে পোশাক বানায়। ইতোমধ্যেই লুটন টাউন, ফরেস্ট গ্রীন রোভার্স এবং তিনটি ফর্মুলা ই-টিমের সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা।
এমনকি রয়্যাল পোরট্রাশ গলফ ক্লাবের ‘দ্য ওপেন’-এর জন্যও তারা এক্সক্লুসিভ কালেকশন তৈরি করেছে।

তবে সবচেয়ে বড় অর্জন—হ্যারি কেইনের মতো একজন সুপারস্টারকে তারা পেয়েছে নিজেদের পাশে।

একজন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, ইউরোপের অন্যতম বড় ক্লাবের স্ট্রাইকার, যার সামনে ছিলো নাইকি, অ্যাডিডাস বা পুমার মতো ব্র্যান্ডের অফার—তিনি কেন রেফলো-র মতো নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়ালেন?

উত্তরটি মিলবে তার কাজের ধরনে। কেইন শুধু একজন মুখ হয়ে থাকতে চাননি; তিনি চেয়েছেন সংস্থাটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে।
পরিবেশবান্ধব দর্শনে বিশ্বাসী কেইনের মন জয় করেছে মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিকে রেফলো-র ১০ লাখ গাছ রোপনের প্রতিশ্রুতি।

তার ভাই চার্লি যখন রেফলো সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন, সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল এই যাত্রা। কেইন নিয়মিত প্রডাক্ট রিভিউ দেন, ডিজাইন নিয়ে মতামত জানান, এমনকি নিজের পরিচিত তারকাদের মধ্যেও ব্র্যান্ডটির কথা ছড়িয়ে দেন।

রেফলো কাহিনি কেবল কেইনকে ঘিরেই নয়। বর্তমান ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নিজের ব্র্যান্ড বা পছন্দসই প্রতিষ্ঠানে গভীরভাবে জড়িত হওয়ার ঝোঁক বাড়ছে।

২০১৮ সালে রজার ফেদেরার নাইকি ছেড়ে অন রানিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করে তিন শতাংশ শেয়ার নেন। শুধু অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নয়, তিনি হয়ে উঠেন প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত চেহারা। ফলাফল, অন এখন সুইজারল্যান্ডের গর্ব, বিশ্বব্যাপী জুতার দুনিয়ায় এক শক্তিশালী নাম।

স্টিফেন কারিও সেই একই পথে। ২০১৩ সালে নাইকি থেকে সরে এসে আন্ডার আর্মারের সঙ্গে চুক্তি করেন। পরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কারি ব্র্যান্ড’—যার প্রেসিডেন্ট তিনি নিজেই। ব্র্যান্ডের ডিজাইন, মার্কেটিং, এমনকি নতুন অ্যাথলেট সাইন করার প্রক্রিয়াতেও সরাসরি যুক্ত তিনি। ‘কারি ব্র্যান্ড’-এর লক্ষ্য, বিশ্বজুড়ে তরুণদের জন্য ৩০০টি বাস্কেটবল কোর্ট তৈরি করা।

লিভারপুলের নতুন রাইটব্যাক জেরেমি ফ্রিমপংও এই তালিকায় যুক্ত। নিউ ব্যালেন্সের সঙ্গে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তির পাশাপাশি তিনি তৈরি করেছেন ‘দ্য পাথওয়েজস প্রজেক্ট’, যা ১৫–২২ বছরের ফুটবলারদের বিকল্প ক্যারিয়ারের দিক নির্দেশনা দেয়।