‘বিশ্বাসঘাতক’ বার্সা! ক্লাব ছাড়তে ‘নারাজ’ অধিনায়ক, মিলছে না বেতনের অঙ্ক

SHARE

বহু কাঠখড় পুড়িয়েও বার্সেলোনায় থাকতে পারছেন না অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত জার্মান গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন। ইতিমধ্যে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসপানিওল থেকে গোলরক্ষক হুয়ান গার্সিয়াকে ২৫ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজে দলে টেনেছে কাতালান ক্লাবটি। তাই প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হিসেবে তিনি যে আর বার্সায় থাকছেন না তা এক প্রকার নিশ্চিতই বলা যায়।

এ ছাড়া ম্যানুয়াল নয়্যারের বিদায়ের পর জার্মান জাতীয় দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক স্টেগেন।
সামনের বছর যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপই হতে পারে তার প্রথম মেজর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। কিন্তু ক্লাবে দ্বিতীয় গোলরক্ষক হয়ে থাকলে সেটা হুমকির মুখে পড়বে। তাই ক্লাব বিশ্বাসঘাতকতা করছে এমন গন্ধ পাচ্ছেন এই এক যুগ বার্সার পোস্ট সামলানো এই অধিনায়ক।

এদিকে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামসের সঙ্গে মৌখিক সমঝোতায় পৌঁছেছে বার্সা।
ক্লাবটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—৬০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ তাদের পথে কোনো বাধা নয়।

তবে নতুন খেলোয়াড় আনার সঙ্গে বার্সার আসল চ্যালেঞ্জটাও শুরু হচ্ছে এখন। আর তা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দের বিদায় জানানো। লা লিগার বেতনসীমা অতিক্রম করে ফেলার কারণে নতুনদের নিবন্ধনের জন্য অর্থসংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের।
আর এ তালিকার শীর্ষেই রয়েছেন ক্লাব অধিনায়ক ও দীর্ঘদিন বার্সার গোলপোস্ট সামাল দেওয়া গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন।

৩৩ বছর বয়সী এই জার্মান গোলরক্ষক গেল মৌসুমে হাঁটুর গুরুতর ইনজুরির কারণে মাত্র ৯ ম্যাচ খেলতে পারেন। প্যাটেলার টেনডন পুরোপুরি ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় পুরো মৌসুম মাঠের বাইরে কাটাতে হয় তাকে।

বয়স, ইনজুরি এবং বেতনের হিসাব—সব মিলিয়ে বার্সার জন্য টার স্টেগেন এখন আর্থিক বোঝা। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী তিনি ২০২৮ সাল পর্যন্ত ক্লাবে থাকবেন এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে তার বেতন অন্যতম সর্বোচ্চ।

লাপোর্তা বার্সার প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসে ২০১৪ সালের মে মাসে বরুসিয়া মনশেনগ্লাদাখ থেকে বার্সায় আসা টের স্টেগেনের চুক্তির মেয়াদ বাড়ান।

তবে এর ফলে টার স্টেগেনের বেতন ভার আরও দীর্ঘমেয়াদে বার্সার কাঁধে আসে। ক্লাব সূত্র বলছে, তারা এতটাই মরিয়া যে প্রয়োজন হলে তাকে বিনা মূল্যেও ছেড়ে দিতে রাজি।

এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ এবং চাপ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। টার স্টেগেনের ঘনিষ্ঠরা বিশ্বাস করেন, সম্প্রতি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন আসছে, তা মূলত তাকে ক্লাব ছাড়ার দিকে ঠেলে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।

তবে বার্সার ভেতর থেকেও বলা হচ্ছে, কেবল আর্থিক দিক নয়—খেলোয়াড়ী বিষয়েও চিন্তা আছে। বার্সার চোখে, ২৪ বছর বয়সী গার্সিয়াকে দলে টানা ভবিষ্যতের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।

এরই মধ্যে কিছু বিতর্কও সামনে এসেছে। এপ্রিল মাসে জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড-এ এক সাক্ষাৎকারে টার স্টেগেন বলেন, তিনি খুব দ্রুত মাঠে ফিরতে চান এবং প্রস্তুত হয়ে ‘কোচ হ্যান্সি ফ্লিককে জানাবেন’। ক্লাব সূত্রের মতে, এই মন্তব্য অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন, যেটা কোচের উপর চাপ প্রয়োগ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি দলের সফরসঙ্গী হননি। একই সময়ে ইনজুরড জুল কুন্দে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মিলানে গিয়ে দলের পাশে ছিলেন। এই তুলনা নিয়েও ক্লাবের ভেতরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

টার স্টেগেনের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি, বরং ক্লাব ছাড়ার কোনো কারণ দেখছে না নিজের জায়গা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী এই গোলরক্ষক।

জাতীয় দলের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ক্লাবের কেউ এই বিষয়ে কিছু বলেনি। আমি বার্সেলোনাতেই থাকব।’

তবে গত মৌসুমে ইলকায় গুন্দোয়ানের সঙ্গে যা ঘটেছিল, সেটিও উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কোচ ফ্লিকের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত আলোচনা শেষে গুন্দোয়ান নিজেই সিদ্ধান্ত বদলে সিটি ফিরে যান। এবার সেই ‘আলোচনা’ই হতে পারে টের স্টেগেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বড় ক্ষেত্র।

বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর ডেকো বলেন, ‘আমি নয়, এই আলোচনা কোচের দায়িত্ব। খেলোয়াড়দের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তার কাজ, এবং প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজের লক্ষ্য থাকে।’

১৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে বার্সার প্রাক-মৌসুম। সেদিনই প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবেন ফ্লিক ও টের স্টেগেন।

তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—যদি ছাড়তেই হয়, তাহলে টার স্টেগেন যাবেন কোথায়?

আপাতত লা লিগার অন্য কোনো ক্লাবে যাওয়ার সুযোগ নেই টের স্টেগেনের। লিগের নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রি ট্রান্সফারে গেলেও নতুন ক্লাবে অন্তত আগের বেতনের ৫০ শতাংশ দিতে হবে। গোলরক্ষকের বেতনের আকাশছোঁয়া পরিমাণের কারণে বার্সার পক্ষে সেটিও বাস্তবসম্মত নয়।

এদিকে সৌদি লিগের কথা শোনা গেলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ৩০ বছরের বেশি বয়সী খেলোয়াড়দের দলে নেওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহী সৌদি ক্লাবগুলো। জার্মানিতেও জায়গা নেই, বায়ার্নে নয়্যার আছেন এবং অন্য ক্লাবগুলো এতো বেতন দিতে পারবে না। প্রিমিয়ার লিগেও তার জন্য তেমন কোনো সম্ভাব্য গন্তব্য নেই।

সব মিলিয়ে জটিল এক পরিস্থিতি। আপাতত নজর রাখতে হচ্ছে—জুলাইয়ের সেই ফ্লিক-স্টেগেন আলোচনার দিকেই।