নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র মুসলিম তরুণ মামদানি

SHARE

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হতে চলেছেন জোহরান মামদানি। ৩৩ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সমাজতন্ত্রী জোহরান মামদানির এ বিস্ময়কর জয় এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, চলতি বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে তিনি নিজেকে দলের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
তবে চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েক দিন লাগতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক ফল তার পক্ষে যাওয়ায় তিনিই মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থিতা করবেন বলে আশা করা যায়।

সর্বশেষ নির্বাচনী ফল অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী বাছাইয়ে প্রাইমারির প্রথম রাউন্ডে ৯৩ শতাংশ ভোট গণনার পর মামদানি ৪৩.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কুওমো পেয়েছেন ৩৬.৪ শতাংশ।
নিউইয়র্ক সিটি একটি র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। যেহেতু কোনো প্রার্থীই সম্ভবত ৫০ শতাংশ ভোটে পৌঁছাবেন না, তাই নির্বাচন বোর্ড এখন ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থীদের গণনা করবে। এই গণনায় কুওমোর চেয়ে মামদানি বেশি ভোট পাবেন বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।

নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মুসলিমের বসবাস, যা শহরের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ।
২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনে মুসলিম ভোটাররা মোট ভোটারের প্রায় ১২ শতাংশ ছিল। মামদানি তার প্রচারণার শুরু থেকেই ইসলামি বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে দৃশ্যমান রেখেছেন। রমজানের সময় রোজা রেখেই প্রচারণায় অংশ নেন এবং জীবনযাত্রার খরচ কমানোর বার্তা পৌঁছে দেন শহরের মসজিদ ও মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে।

সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে পরাজিত করে মামদানির এই বিজয় এসেছে একটি বৈচিত্র্যময় ভোটার জোটের মাধ্যমে, যার মধ্যে ছিল তরুণরা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এবং অনেক প্রথম বা অনিয়মিত ভোটার। ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভিন্ন পটভূমির নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা মামদানির বিজয়কে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করেছে।
অনেকে তার অভিবাসী পটভূমিকে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।

লিবারেল ভাষ্যকার ও লেখক ওয়াজাহাত আলী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘একজন মুসলিম অভিবাসীর সন্তান নিউইয়র্কের মেয়র হতে চলেছেন, কারণ তিনি একজন ইহুদি ও একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থীর সঙ্গে পারস্পরিক সমর্থন গড়ে তুলেছেন। এটি আমেরিকান গণতন্ত্রের এক অনন্য ও সৌন্দর্যময় গল্প।’ তিনি ইঙ্গিত করেন মামদানির ব্র্যাড ল্যান্ডার ও মাইকেল ব্লেকের সঙ্গে পারস্পরিক সমর্থনের প্রতি।

ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান এবং গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি তার সমর্থনের কারণে মামদানিকে ইসলামবিরোধী বা ইহুদি বিদ্বেষী বলে আক্রমণ করা হয়েছিল। তবে তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে এসব অভিযোগকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

প্রচারের শেষ মুহূর্তে মামদানি আবেগঘনভাবে জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থানের কারণে তিনি এবং তার পরিবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন। তিনি বলেন, একজন ধর্মবিশ্বাসীর ওপর এই ধরনের আক্রমণ কী ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে, তা তিনি স্বজনদের সঙ্গে মিলে খুব কাছ থেকে অনুভব করেছেন।

জয়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে বুধবার ভোরে মামদানি বলেন, ‘বিশ্বের নানা প্রান্তে কী ঘটছে তা নিয়ে নিউইয়র্কবাসীর অনুভূতি আছে, আমিও তাদের একজন। আমি আমার বিশ্বাস বা মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি কখনো ত্যাগ করবো না।’

ইহুদি প্রার্থী ব্র্যাড ল্যান্ডার তার বিজয় উদযাপন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা মুসলিম ও ইহুদি নিউইয়র্কারদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হতে দেব না।’

সূত্র : নিউয়র্ক টাইমস