যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছেন শত শত বিক্ষোভকারী। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ৮টা থেকে কারফিউ শুরু হয়, কিন্তু তা উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, পাঁচ দিনের বিক্ষোভে যেভাবে অস্থিরতা বেড়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে জীবন ও সম্পদের সুরক্ষায় এই কারফিউ জারি করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শহরটির মেয়র ক্যারেন ব্যাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে ভাঙচুর ও লুটপাট ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শহরজুড়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। আমি আগামীকাল নির্বাচিত নেতা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। ধারণা করছি, কারফিউ কয়েক দিন চলবে।’
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি শহরে।
এর মধ্যে নিউইয়র্ক ও টেক্সাসের একাধিক শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় টেক্সাসেও মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়, অভিবাসন অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে নিউইয়র্ক, টেক্সাসের একাধিক শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কে বিক্ষোভ বেশির ভাগই শান্তিপূর্ণ।
তবে একাধিক গ্রেপ্তার উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
যে কারণে বিক্ষোভ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত, আটক এবং নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর যে প্রকল্প নিয়েছেন, সেখানে প্রথম বড় ধরনের বাধা এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে। গত পাঁচ দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ জেলাটি। যুক্তরাষ্ট্রের জনশুমারি দপ্তর মতে, খোদ লস অ্যাঞ্জেলেস সিটিতেই বসবাস করেন প্রায় ৯ লাখ নথিবিহীন অভিবাসী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
আবার শহরটিতে বৈধ-অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারটি বেশ গোলমেলে। কারণ লস অ্যাঞ্জেলেসে এমন বহু অভিবাসী পরিবার রয়েছে, যেখানে এক বাড়িতে বসবাসকারী লোকজনের কারো বৈধ নথি রয়েছে, আবার কারো নেই। গত ৬ জুন শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলি এলাকা প্যারামাউন্টে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করতে অভিযানে নামেন পুলিশ ও আইসিই সদস্যরা। তবে অভিযানের শুরুতেই তাঁরা ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। প্যারামাউন্টের বাসিন্দারা তীব্র বিক্ষোভের পাশাপাশি পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, বোতল ও মলোটভ ককটেল বা প্যাট্রলবোমা ছুড়তে থাকেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পরের দিন পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের সহায়তার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আধা সামরিক বাহিনী হাজার ন্যাশনাল গার্ডের দুই হাজার সদস্যকে মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার পরিবর্তে সংঘাত আরো বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় ৯ জুন সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আরো দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং তাদের সঙ্গে ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প। সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা গভর্নরের : ট্রাম্পের এমন সামরিক পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। তিনি সেনা মোতায়েনকে ‘অপ্রয়োজনীয়, অবৈধ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেন। এক ভাষণে গভর্নর নিউজম বলেন, ‘আমরা আমেরিকানরা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সংবিধানের পক্ষে। আমাদের উচিত এখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।’