গুমের ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে, ঘটনার নায়ক সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’: প্রধান উপদেষ্টা

SHARE

গুমসংক্রান্ত ভয়াবহ ঘটনাগুলোর প্রামাণ্য উপস্থাপন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তার মতে, এই ঘটনাগুলো কেবল জাতীয় নয়, বৈশ্বিকভাবেও গভীর আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।

বুধবার (৪ জুন) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গঠিত গুম তদন্ত কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেয়। এ সময় ইউনূস বলেন, “কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা! সমাজের তথাকথিত ‘ভদ্রলোকেরা’, আত্মীয়-স্বজনের মুখোশ পরে এসব অমানবিকতা ঘটিয়েছে। গা শিউরে ওঠে—তিন ফুট বাই তিন ফুট খুপরিতে দিনের পর দিন বন্দিত্ব! এই নির্মমতা প্রকাশ্যে আনতে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত।”

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি যাচাই করা হয়েছে। মোট অভিযোগ সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এখনও তিন শতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন।

কমিশনের সদস্যরা জানান, অনেক জড়িত কর্মকর্তা অনুশোচনায় ভুগছেন এবং আত্মশুদ্ধির চেষ্টায় এগিয়ে আসছেন। এমনকি কয়েকজন লিখিতভাবে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়ে গণভবনে চিঠিও দিয়েছেন। এক সময়ের সেনাপ্রধান সেই চিঠির অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এই বিষয়ে ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং বলেন, “এটি যেন বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত থাকে।” পাশাপাশি তিনি সব মন্ত্রণালয়কে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।

কমিশনপ্রধান আরও জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যেন অন্তত ব্যাংক লেনদেন করতে পারে, সে বিষয়ে আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে সাত বছর পর নিখোঁজদের ‘মৃত’ ঘোষণা করার বিধান রয়েছে, যা পাঁচ বছরে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

গুম তদন্তে নিয়োজিত সদস্যদের সাহসিকতার প্রশংসা করে ইউনূস বলেন, “আপনারা ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে যে কাজ করছেন, তা ভবিষ্যতের মানবাধিকার কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”