ইসরায়েল গাজায় ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেছে বলে বিশ্বাস করেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যদিও বাইডেন প্রশাসনের সময় দায়িত্বে থাকাকালে তিনি এ ধরনের কোনো বক্তব্য প্রকাশ্যে দেননি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিলার বলেন, ‘এটা নির্দ্বিধায় সত্য—ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখন আপনি বক্তৃতামঞ্চে (পোডিয়ামে) থাকেন, তখন আপনি আপনার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন না, আপনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত ও অবস্থান তুলে ধরেন।
’ এটি বলার পেছনে তার যুক্তি ছিল, তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিশিয়াল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলেন, যেখানে ব্যক্তিগত মতামতের স্থান নেই।
নেদারল্যান্ডসের পত্রিকা এনআরসি-এর এক তদন্ত অনুসারে, বিশ্বের অনেক শীর্ষস্থানীয় গণহত্যা বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড একটি গণহত্যা। কিন্তু মিলার নিজে গাজায় চলমান যুদ্ধে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ হয়েছে কি হয়নি, এটি আর প্রশ্ন নয়—এটি নিশ্চিতভাবে হয়েছে।
’
মিলার আরো বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি বড় সংঘাতে, এমনকি গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সেনাবাহিনীর মধ্যেও কিছু সদস্য যুদ্ধাপরাধ করে। পার্থক্য হলো, গণতন্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সেই অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনে। কিন্তু ইসরায়েল এখনো তা করেনি।’ তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের অনেক সেনা সদস্য যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং সেই দায়ভার সরকার পুরোপুরি নেয়নি।
মিলারের এই মন্তব্য এমন একসময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েল গাজায় অন্তত ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ফেলেছে, যাদের মধ্যে বড় অংশ নারী ও শিশু। ২০ লাখ গাজাবাসী এখন অহরহ ক্ষুধার মুখে রয়েছে এবং ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন কখনোই ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করেনি। বরং মিলার নিজেই যখন মুখপাত্র ছিলেন, তখন তিনি বারবার ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলেছেন এবং জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অভিযোগগুলো খণ্ডন করেছেন। তিনি এমনকি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগকে বিরোধিতামূলক ও ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও ইসরায়েলের প্রতি একই ধরনের সমর্থন বজায় রেখেছে, আন্তর্জাতিক মহলের প্রবল সমালোচনা এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও।
মিলারের এই মন্তব্য ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, ওয়াশিংটন সরকার তার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না।
সূত্র : আল-আরাবিয়া