ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশের সিরেবনে একটি পাথর খনিতে ধসে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে এখনও অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা (বিএনপিবি)। খনিটির ধসের ফলে বেশ কয়েকজন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে সিরেবন জেলার গুনুং কুদা খনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে বিশাল পাথর সরানো হচ্ছে এবং জরুরি কর্মীরা মরদেহগুলো ব্যাগে ভরে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কীভাবে উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে একটি মরদেহ বের করার চেষ্টা করছেন। আরেকটিতে দেখা যায়, পাথর ও মাটি ধসে পড়ার সময় চারপাশে ধোঁয়ার মেঘের মতো ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে এবং আতঙ্কিত মানুষজন দৌড়ে নিরাপদ স্থানে পালাচ্ছেন।
বিএনপিবি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তবে কতজন নিখোঁজ তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
সংস্থাটি জানায়, তিনটি খননযন্ত্রসহ বেশ কিছু ভারী যন্ত্রপাতি ধসে পড়া মাটির নিচে চাপা পড়েছে এবং উদ্ধার অভিযান শনিবার জুড়ে চলবে।
সিরেবন জেলা পুলিশের প্রধান সুমারনি (যিনি একক নাম ব্যবহার করেন) জানান, উদ্ধারকারী দল এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে ১২ জন আহত ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, ধসের কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং খনির মালিক ও শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
পুলিশ, জরুরি কর্মী, সেনা ও স্বেচ্ছাসেবীরা পাঁচটি এক্সক্যাভেটর নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ভূমি এখনও অস্থিতিশীল থাকায় নতুন করে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে, যা উদ্ধার অভিযানে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
পশ্চিম জাভার গভর্নর দেদি মূলিয়াদি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে জানান, দুর্ঘটনাস্থলটি চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং শ্রমিকদের জন্য কোনো নিরাপত্তা মান বজায় রাখা হয়নি। তিনি বলেন, ‘খনিটি তার গভর্নর হওয়ার আগেই চালু হয়েছিল এবং তার একে বন্ধ করার অধিকার ছিল না।’ তবে তিনি জানিয়েছেন, গুনুং কুদা খনিটি এবং পশ্চিম জাভার আরও চারটি বিপজ্জনক খনি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর কারণে জীবন ও পরিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ায় অবৈধ খনির দৌরাত্ম্য
ইন্দোনেশিয়ায় অবৈধ খনি পরিচালনা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা, যা নিম্ন মজুরি পাওয়া শ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ হলেও জীবিকার একমাত্র পথ হয়ে উঠেছে।
এসব খনিতে ভূমিধস, বন্যা এবং সুড়ঙ্গ ধসের কারণে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটে। অধিকাংশ খনিতে বালি, পাথর বা সোনার খনিজ প্রক্রিয়াকরণে শ্রমিকরা বিষাক্ত পারদ ও সায়ানাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকেন, অথচ তাদের কোনো সুরক্ষা নেই।
এর আগেও মে মাসে পশ্চিম পাপুয়ার আরফাক পর্বত এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টির কারণে একটি ছোট খনির পাশে ভূমিধস ও বন্যা হয়, যাতে কমপক্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালেও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে একটি অবৈধ স্বর্ণখনিতে প্রবল বর্ষণে ভূমিধস হয়, যাতে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়।
সূত্র : আলজাজিরা