জাতীয় বাংলাদেশে এই উত্তর দিইনি, জাপানে দিলে ঝামেলা হবে : ড. ইউনূস

SHARE

চার দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে জাপানের টোকিওতে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে নিক্কি এশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি তিনি।

নিক্কি এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনূস একজন ছাত্রনেতাকে জানিয়েছিলেন যে— যদি দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছায়, তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এই প্রশ্নের উত্তর দিইনি।
যদি আমি জাপানে উত্তর দিই, তাহলে সেটি আমার জন্য অনেক ঝামেলার সৃষ্টি করবে।’

বৃহস্পতিবার ‘নিক্কেই ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর সম্ভাব্য ৩৭ শতাংশ শুল্কের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে আরো বেশি তুলা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবকে বাণিজ্য আলোচনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু প্রতিটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান, সে প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানির পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করবে।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা অনেক তুলা সেন্ট্রাল এশিয়া থেকে কিনি, আবার ভারত থেকেও। এখন ভাবছি, কেননা আমরা এগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনি, এতে আমাদের মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটাই কমে যাবে।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি ছিল।

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৭.৯ বিলিয়ন ডলারের কাঁচা তুলা প্রয়োজন হয়, যার বেশির ভাগই আসে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো সেন্ট্রাল এশিয়ান দেশগুলো থেকে। ২০২৪ সালের আমদানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তুলা বাংলাদেশের মোট আমদানির ১২.৫ শতাংশ ছিল।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমেরিকার তুলা উৎপাদকরা আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে’ এবং তারা ‘প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কিছু রাজনৈতিক সংযোগ’ তৈরিতে সহায়তা করছে।

তিনি আরো বলেন, আমেরিকার ‘কটন বেল্ট’ অঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে কংগ্রেস এবং সিনেটে যেসব প্রতিনিধি নির্বাচিত হন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারেন।

জ্বালানির বিষয়েও ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানি করলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তা কেনা সম্ভব।

যদিও বাণিজ্য আলোচনার সময়সূচি বা শুল্ক কতটা কমবে তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবুও তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা একে হুমকি হিসেবে দেখি না, বরং সুযোগ হিসেবে দেখি।’

এদিকে, মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত বুধবার ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আদালত রায় দিয়েছেন, সংবিধান অনুসারে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্ট একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

দেশীয় অর্থনীতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, আগের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে থাকা আরো ১১-১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ শনাক্ত ও জব্দ করা হয়েছে।

এই অর্থের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দুটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হবে। এ ছাড়া এটি দরিদ্র জনগণের জীবন বদলাতে এবং তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যবহৃত হবে বলে জানান তিনি।