যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডারেল ঘুষ ও জালিয়াতির মামলায় দণ্ডিত ভার্জিনিয়ার এক প্রভাবশালী সাবেক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা স্কট জেনকিনসকে ক্ষমা করেছেন। এই সিদ্ধান্ত কার্যত তাকে কারাগারে যাওয়া থেকে রক্ষা করল, যার দিনক্ষণ ইতোমধ্যে নির্ধারিত ছিল।
কুলপেপার কাউন্টির নির্বাচিত সাবেক শেরিফ জেনকিনস ৭৫ হাজার ডলারেরও বেশি ঘুষ গ্রহণের দায়ে গত ডিসেম্বরে দোষী সাব্যস্ত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়েছিলেন। এ বছর মার্চে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “শেরিফ স্কট জেনকিনস, তার স্ত্রী প্যাট্রিশিয়া এবং তাদের পরিবারকে নরকের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।” তিনি জেনকিনসকে একজন “চমৎকার মানুষ” বলে আখ্যায়িত করে দাবি করেন, এটি ছিল বাইডেন প্রশাসনের “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার বিভাগের” আক্রমণ।
জেনকিনসের বিরুদ্ধে একাধিক ফেডারেল অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে ছিল ষড়যন্ত্র, ‘অন্যায্য সেবা গ্রহণে প্রতারণা’ এবং সরকারি কর্মসূচিতে ঘুষ গ্রহণের সাতটি অভিযোগ। প্রসিকিউটরদের মতে, জেনকিনস আটজনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন ছিলেন এফবিআইয়ের ছদ্মবেশী এজেন্ট। ঘুষের বিনিময়ে এসব ব্যক্তি ‘সহায়ক ডেপুটি’ পদ পেয়ে যান, যার ফলে তারা আইন অমান্য করেও ছাড় পেতেন—এমনকি অস্ত্র বহনের অনুমতিও পেয়ে যেতেন, যদিও তাদের কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না।
মামলাটি বিচার করেছেন বিচারক রবার্ট ব্যালু, যিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মনোনীত হলেও এটি ছিল একটি স্বাধীন জুরি ট্রায়াল। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেনকিনস নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে চাইলেও বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি এক বিবৃতিতে বলেন, “স্কট জেনকিনস তার দায়িত্ব ও শপথের চরম অবমাননা করেছেন। এই মামলা প্রমাণ করে, যেই হোক না কেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য দায় এড়ানো যাবে না।”
জেনকিনস ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো শেরিফ নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী দুই দফায় পুনর্নির্বাচিত হন। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি ট্রাম্পের শরণাপন্ন হন এবং এপ্রিলের এক ওয়েবিনারে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব তথ্য শুনলে অবশ্যই আমাকে সাহায্য করতেন।”
এই ক্ষমার মাধ্যমে জেনকিনস যুক্ত হলেন ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ক্ষমাপ্রাপ্তদের তালিকায়, যেখানে এর আগেই ক্যাপিটল হিল হামলায় অভিযুক্ত প্রায় ১,৬০০ জন ব্যক্তি দণ্ড লাঘব বা সম্পূর্ণ ক্ষমা পেয়েছেন।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ফেডারেল অপরাধে দণ্ডিতদের ক্ষমা করার পূর্ণ অধিকার রাখেন—শুধুমাত্র অভিশংসনের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা প্রযোজ্য নয়। প্রেসিডেনশিয়াল পারডন একজন দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা বাতিল করে এবং তাকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়, যার মধ্যে রয়েছে ভোটাধিকার ও নির্বাচন করার অধিকারও।