সাবেক স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ সদৃশ নতুন একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে তিনি বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির এমন ভয়ঙ্কর নির্দেশনা নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নেতাকর্মীদের এ ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
শেখ হাসিনার ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ফোনালাপ রোববার রাতে গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। নতুন এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠ সদৃশ একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়ি ঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়?’
ফোনকলের অন্য প্রান্তের কণ্ঠটি গোবিন্দগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের দাবি করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখন বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে। বেশি ভালো থাকবেন না আপনি। দেখো ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শত্রুরা টেকে কি না? কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না। যে কয়টা নাফরমানি করছে তাদের একটারও অস্ত্র থাকবে না।’
তখন শাকিল বলেন, ‘আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগোন নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবেও ওই যে সুদখোর ইউনুসের গুটি গুটি চেহারার দ্বার আটকে গেছে মানুষের কাছে।’
শাকিল বলেন, ‘জ্বি নেত্রী অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়তেই কেউ মুখ খুলতে পারছে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের ভয় দিতে হবে।’
ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘জ্বি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার চেয়ারম্যান বর্তমান ছিলাম নেত্রী, আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরপর ছিলাম দুবার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। ওনার বাড়ি গাড়ি সব জ্বালাই পুড়াই দিছে। আমারও বাড়ি গাড়ি সব জ্বালাই পোড়াই দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্যা মামলা দিছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পোড়াই দিছে কে?’
শাকিল বলেন, ‘ওরাই নেত্রী, জামায়াত বিএনপি সকলই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘর-বাড়ি নেই?’
শাকিল বলেন, ‘জ্বি আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়।’
শাকিল বলেন, ‘জ্বি না, না নেত্রী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাদের নাই, তাহলে কারো ঘর-বাড়ি থাকবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মামলা, আমারতো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, আমারতো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি সবাই তালিকা কর। তোমরাও তালিকা কর। ২২৭ মার্ডারের লাইন্সেস পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, শোয়া দুইশো মামলায় একই শাস্তি। তাই না। ঠিক আছে সেই শাস্তি নেব। তার আগে শোয়া দুইশো হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে। এবার একবার আসতে পারলে কেউ ফেলাইতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ফোনালাপটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তবে অডিওটি সত্যিই তার কিনা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশ করার শর্তে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি শাকিল আলম বুলবুলের। বুলবুলসহ সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ দুইজনই ভারতে পালিয়ে গেছেন।