আর এক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট। শেষ সময়ে জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে পুরুষদের সমর্থন বেশি। পোলস্টাররা বলছেন, নারীরা বলেছেন, তাঁরা কমলা হ্যারিসকে পছন্দ করেন। যাঁরা জনমত জরিপ করেন, তাঁরা পোলস্টার নামে পরিচিত।
রাজনীতিতে এই লৈঙ্গিক ব্যবধান এক দশক ধরে চলা সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলে এই পরিবর্তন প্রভাব ফেলতে পারে।
কমলা প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ নারী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি দ্বিতীয়। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা অবশ্য সব সময় নিজের পরিচয় নিয়ে কথা না বাড়ানোর জোর প্রচেষ্টা চালান।
গত মাসে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘দেখুন, জাতি এবং লিঙ্গনির্বিশেষে সব আমেরিকানের জন্য এই মুহূর্তে এই দায়িত্ব পালনে আমি সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি বলে আমার বিশ্বাস। এ কারণেই আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’
তবে কমলার সব চেষ্টা সত্ত্বেও প্রার্থীদের লৈঙ্গিক পরিচয় এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উল্লেখ করার মতো বিষয় হয়ে উঠেছে।
আমেরিকায় এবার নতুন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। সেটা হলো ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’। কোনো সন্দেহ নেই যে অনেক ভোটার বিষয়টি পছন্দ করেছেন। কেউ কেউ এই নতুনত্বে কিছুটা বিচলিত হয়েছেন।
এ নিয়ে কমলার নির্বাচনী শিবির থেকে কখনো খোলাখুলি কথা বলা হয়নি। তবে একজন কর্মকর্তা বিবিসির প্রতিনিধির কাছে সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, ভোটারদের মনে লৈঙ্গিক বিভেদের বিষয়টি রয়ে গেছে। এই মনোভাবের কারণে অনেকে প্রেসিডেন্ট পদে নারীকে ভোট দেওয়ায় নিরুৎসাহিত হতে পারেন।
এই ২০২৪ সালে এসেও কিছু মানুষ একজন পোলস্টারকে বলেছেন, একজন নারী ওভাল অফিসের জন্য যোগ্য বলে তাঁদের মনে হয় না।
ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন কৌশলবিদ ভোটারদের এই মানসিকতা বুঝতে পারার একটি উপায়ও বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, যখন ভোটাররা পোলস্টারদের বলেন, কমলা ‘প্রস্তুত’ নন বা সঠিক ‘ব্যক্তিত্ব’ নন কিংবা ‘এটা কেমন হবে’, তখন বুঝে নিতে হবে সমস্যা হলো কমলা একজন নারী।
ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির অবশ্য লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিষয়টি মানতে নারাজ। বরং এ সপ্তাহে তারা বলেছে, ‘কমলা দুর্বল, অসৎ এবং বিপজ্জনকরকম উদার। এসব কারণেই আমেরিকার জনগণ ৫ নভেম্বর ভোটের দিন তাঁকে বাতিল করবেন।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির বিশেষ প্রতিনিধি কেটি কাই বলেছেন, ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান লানজা তাঁকে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। খুদে বার্তায় বলা হয়, ‘ট্রাম্প জিতবে বলেই আমার মনে হচ্ছে। লৈঙ্গিক বৈষম্যের কারণে আমরা এগিয়ে আছি।’
সর্বশেষ একজন নারী যেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেবার তাঁর লৈঙ্গিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আট বছর আগে প্রথম কোনো নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বড় দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। সেবার তাঁর শিবিরের স্লোগান হয়ে উঠেছিল, ‘আমি তাঁর সঙ্গে আছি।’
২০১৬ সালের পর নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল এসেছে। ২০১৭ সালে হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলনের ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। ওই আন্দোলনের ফলে পেশাজীবী নারীদের নিয়ে আলোচনার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। মি টু আন্দোলনের ফলে হয়তো কমলার মতো একজন প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়া সহজ হয়েছে।
কিন্তু বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়ের অগ্রগতিতে এ ধরনে বড় পদক্ষেপকে কেউ কেউ একধাপ পিছিয়ে যাওয়া বলে ব্যাখ্যা করেছেন। বিশেষ করে তরুণদের কাছে। তাঁদের মনে হচ্ছে তাঁরা পেছনে পড়ে থাকছেন। অথবা এসব পরিবর্তন রক্ষণশীল আমেরিকানদের জন্য শুধু বিরক্তির কারণ হয়েছে। তাঁরা পুরোনো লৈঙ্গিক বৈষম্যের ধারণা নিয়ে রয়েছেন।
সিবিএস নিউজের জনমত জরিপেও নির্বাচনে লৈঙ্গিক বৈষম্য থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। গতকাল রোববার ওই জরিপের ফলাফল প্রকাশ পায়।
সিবিএসের জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে লৈঙ্গিক সমতার প্রচারে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে বিশেষ করে পুরুষেরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ট্রাম্পের সমর্থক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আর বেশির ভাগ নারী বলেছেন, ওই সব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। তাঁরা সম্ভবত কমলাকে সমর্থন দেবেন। নারীদের তুলনায় খুব কম পুরুষ মনে করেন, কমলা শক্তিশালী নেতা হতে পারবেন। বরং অধিকাংশ পুরুষ মনে করেন, ট্রাম্প একজন শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠবেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক জরিপ বলছে, পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ১৪ শতাংশ। আর নারী ভোটারদের কমলার প্রতি সমর্থন ১২ শতাংশ। এই নির্বাচনের ফল এখন কোন দিকে যাবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন পুরুষ ও নারী ভোটাররাই।