রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় র্যাবের সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের একটি শাখার প্রধান ছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অকালীন (বাধ্যতামূলক) অবসরে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া এই ডাকাতির ঘটনায় র্যাব ৪–এ কর্মরত শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের (নন–কমিশন্ড) নাম এসেছে। তাঁদের বিষয়ে র্যাব ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে র্যাব ৪–এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. রোকনুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ওই র্যাব সদস্যদের নাম উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
এর আগে গত মঙ্গলবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেছিলেন, ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন র্যাব সদস্যের নাম বলেছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে গতকাল আবার যোগাযোগ করা হলে র্যাবের এই মুখপাত্র এই প্রতিবেদককে ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
১১ অক্টোবর শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় ব্যবসায়ী আবু বকরের বাসায় ও কার্যালয়ে ডাকাতি হয়। সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরা ডাকাতেরা নিজেদের যৌথ বাহিনী বলে পরিচয় দেন। তাঁরা ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট করেন বলে গৃহকর্তা ও পুলিশ সূত্র জানায়।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় করা মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এই মামলায় গ্রেপ্তার কামাল হোসেন নামের একজন আসামিকে গত মঙ্গলবার রাতে ডিবির কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। ডিবি জানিয়েছে, কামাল হোসেন সাবেক সেনাসদস্য। তাঁকে গতকাল বুধবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাঁকে ডিবির হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে গত সোমবার ছয়জনের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাঁরাও ডিবির হেফাজতে আছেন। এই ছয়জনের মধ্যে তিনজনকে ডিবি গ্রেপ্তার করে। বাকি তিনজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।
আলোচিত এই ডাকাতির ঘটনায় গত রোববার আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল র্যাব। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে পরদিন ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। বাকি পাঁচজন কোথায়, সেটা নিশ্চিত করে জানা যাচ্ছে না। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ডিবির কাছে দেওয়া কামাল হোসেন ওই পাঁচজনের একজন কি না, সেটাও র্যাব পরিষ্কার করে বলেনি। এমনকি পাঁচজনের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ রাকিব খান গতকাল রাত ১০টার দিকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে র্যাব একজন আসামিকে ডিবিতে হস্তান্তর করেছে। এ নিয়ে র্যাব ডিবির কাছে চারজন আসামি হস্তান্তর করেছে।