জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে ডিসি নিয়োগ নিয়ে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের তদন্ত এখনো শুরু হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও কমিটি কী কী বিষয়ে তদন্ত করবে, কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তা-ও নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। গত ৩ অক্টোবরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছিলেন, ‘এই তিনজনের কথা বলা হয়েছে, এর মানে এই নয় যে অন্যরা এতে যুক্ত হতে পারবেন না। একটি কমিটি করে এটা তদন্ত করা হবে। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে এ রকম কথা, এটি নিয়ে অবশ্যই আমরা উদ্বিগ্ন।’ কিন্তু পাঁচ দিন পার হলেও এর কোনো অগ্রগতির খবর নেই।
তবে নির্ভরশীল একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে, ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি তদন্ত করতে সোমবার (৭ অক্টোবর) আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সেই নির্দেশনাসংক্রান্ত ফাইলটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি) জাহেদা খাতুনের কাছে যাবে।
তিনি এ বিষয়ে অনুমোদন করার পরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে কমিটির কার্যপরিধি ও প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা এবং সাচিবিক সহায়তা প্রদানকারীর বিষয়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
সে অনুযায়ী তদন্তকাজ শুরু করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা। যেহেতু এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি, সে কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তকাজ শুরু করতে পারছেন না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওই তিন উপদেষ্টা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আগামী ১৩ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেনের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। সরকার ১০ অক্টোবর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ও পূজার ছুটি থাকায় আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) মাহবুব হোসেনের শেষ কর্মদিবস হওয়ার কথা। এ কারণে তিনিও বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধেই অভিযোগ তদন্ত করবে উপদেষ্টা কমিটি। ফলে বিষয়টি নিয়ে এই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিব্রত। তাঁদের মধ্যে ডিসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে সত্য, মিথ্যা দুই ধরনেরই বিশ্বাস রয়েছে। তাই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না কেউই। তাঁদের মতে, দেশ স্বাধীনের পর কখনোই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি প্রশাসন।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গত ১০ সেপ্টেম্বর দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে ব্যাপক হট্টগোল হয়। এর মধ্যে এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক এবং ডিসি নিয়োগসংক্রান্ত কিছু চিরকুট উদ্ধারের খবর দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি দৈনিক সংবাদপত্র।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই প্রতিবেদনকে ‘গুজব’, ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান। এরপর ৩ অক্টোবর অপর এক প্রতিবেদনে খোদ মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলোচনার অভিযোগ তুলে ধরে পত্রিকাটি।