ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের

SHARE

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ ও জুলাইয়ে ছাত্র-গণহত্যায় জড়িত অভিযোগে ফ্যাসিবাদী ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী শহিদ আবরার দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।

এছাড়াও ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ, চাকরি প্রদান, ভারতের সঙ্গে সব অন্যায্য চুক্তি বাতিল ও অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর পানিতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমন্বয়ক হাসান আরিফ, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও আব্বাস উদ্দীন।

এছাড়াও বক্তৃতা করেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার, সহকারী সদস্য সচিব হামিম হোসাইন শুভ, মো. শফিক ও জিহাদী ইহসান প্রমুখ।

সমাবেশে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, শহিদ আবরার ফাহাদ ফেসবুকে ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী স্ট্যাটাস লেখায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকে রাতভর নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের কোনো বিচার হয়নি। তাই বারবার বিনা বিচারে পার পাওয়া ছাত্রলীগ জুলাই গণহত্যার সূচনা করতে পরোয়া করেনি।

তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা হামলা করার পর পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবে কর্মরত সংগঠনটির সাবেক নেতাকর্মীরাই ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এ অবস্থায় ছাত্রলীগকে ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার বিকল্প নাই।

এজন্য সরকারকে আইন করে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে সিনেট-সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ গত ১৬ বছরে অব্যাহতভাবে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে নির্যাতন করেছে, পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে, ঠিক মতো ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি, এমনকি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনের নামে অন্যায়ভাবে বাদ দিয়েছে।

এসব অন্যায়ের প্রতিকার করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী কমিশন গঠন করে মজলুম শিক্ষার্থীদের শারিরীক মানসিক একাডেমিক ও পেশাগত ক্ষতির ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানান আবদুল ওয়াহেদ।

তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ শহিদ হয়েছিলেন ভারতের আগ্রাসনের প্রতিবাদ করায়। তাই ভারতের সঙ্গে করা আগ্রাসনমূলক অন্যায্য সব চুক্তি বাতিল করতে হবে। এসব চুক্তি ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিম করেছে বলে চুক্তিগুলো অবৈধ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। মিছিলে ‘শহিদ আবরার, লও লও সালাম’ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘অবিলম্বে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করো’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। দায়ের হয় হত্যা মামলা। ওই মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।