স্বাধীনতার সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে : রাষ্ট্রপতি

SHARE

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে নতুন প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে স্কাউট নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৫২তম বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে তথ্য-প্রযুক্তি, কম্পিউটার, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ প্রায়োগিক কলা-কৌশল রপ্ত করতে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

কিশোর ও তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করে ‘স্মার্ট নাগরিক’ হিসেবে গড়ে তুলতে স্কাউট প্রশিক্ষণ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের শিশু, কিশোর ও যুব সমাজকে ব্যাপকভাবে স্কাউটিংয়ের আওতায় আনার লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন গতানুগতিক স্কাউটিং কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এবং জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে জনমত গড়ে তুলতেও স্কাউট নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘স্বার্থপরতা, হিংসা, লোভ ও নৈতিকতার অবক্ষয় মানুষের সুকুমার বৃত্তিকে ধ্বংস করে দেয়। আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, মাদকাসক্তি, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের কিশোর তরুণদের ওপর মারাত্মক কু-প্রভাব ফেলছে। শহর-উপশহরে কিশোর গ্যাং এর উত্থান ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম এসবেরই বহিঃপ্রকাশ।’

শিশু, কিশোর ও যুবকদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্কাউট নেতৃবৃন্দকে আরও বেশি তৎপর হতে উপদেশ দেন চিফ স্কাউট।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মনির্ভরশীল ও মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কর্মপ্রেরণায় সব কাউন্সিলর, স্কাউটার ও স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি উল্লেখ করেন, যুব বয়সীদের সৎ, চরিত্রবান, আদর্শ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সর্বজনবিদিত ও কার্যকর শিক্ষামূলক কার্যক্রম হচ্ছে স্কাউট আন্দোলন।

বর্তমানে স্কাউটের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮৭ হাজার যা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্কাউটসের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান-২০৩০ অনুসারে স্কাউট সদস্য ৫০ লাখে উন্নীত করার পাশাপাশি এর গুণগত মানও নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরকেও স্কাউটিংয়ে সমানভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, ইপিআই কর্মসূচি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হতে উদ্বুদ্ধকরণ এবং পরিবেশ সচেতনতার মতো স্কাউটদের সেবাধর্মী কাজ তৃণমূল পর্যন্ত আরও বিস্তৃত হলে দেশের মানুষও এর সুফল পাবে।

রাষ্ট্রপতি জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে দেশের যেকোনো দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকা-ে আহত-নিহতদের সেবাদানেও স্কাউটদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

এ সময়ে বাংলাদেশ স্কাউটসের বিগত বছরের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রশিক্ষণ, প্রোগ্রাম, সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রমসহ স্কাউটিং সম্প্রসারণে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’, স্কাউটসের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড রৌপ্য ইলিশ” প্রদান করা হয়।

পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান চিফ স্কাউট। তিনি সেখানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে একটি ফটোসেশনেও অংশ নেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে দেশের যুব সম্প্রদায়কে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত দক্ষ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

স্কাউটিংয়ের সার্বিক কর্মসূচিকে সময়োপযোগী এবং দেশের টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্কাউটদের সক্রিয় অবদান রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এমপি এতে সভাপতিত্ব করেন।

এ সময় বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খানও বক্তব্য দেন।